• খোলা সীমান্তে নজরদারি, অতিরিক্ত বিএসএফ জওয়ান মোতায়েন
    বর্তমান | ০৯ মে ২০২৫
  • অভিষেক পাল, বহরমপুর: মুর্শিদাবাদ জেলায় বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে খোলা সীমান্ত। পড়শি বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক এখন বেশ মধুর। ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ আবহের মধ্যে প্রায়  ১২৫,৩৫ কিলোমিটার উন্মুক্ত অংশ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে ৪২ কিলোমিটার স্থলভাগ। বাকিটা জলভাগ বা নদী। ভারতের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে বাংলাদেশকে সঙ্গে নিতে পারে পাকিস্তান। সেক্ষেত্রে পূর্ব দিকের সীমান্তে সমস্যা তৈরিতে এই দু’টি খোলা অংশকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করতে পারে। এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা। সেই মতো স্থল সীমান্তে যেমন নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, তেমনই মূল পদ্মা ও জলঙ্গিতে মাছ ধরারা ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিএসএফ। সবমিলিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। 

    তবে, পশ্চিমে যুদ্ধের আবহে পূবের নিরাপত্তায় বিএসএফের তৎপরতাও তুঙ্গে। পুলিস এবং বিএসএফ যৌথভাবে সীমান্তবর্তী থানা এলাকায় টহলদারি করছে। বুধবার থেকেই সীমান্তের গ্রামের হাট-বাজার ও জনবহুল এলাকায় রুটমার্চ করতে দেখা গিয়েছে বিএসএফকে। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় থানার পুলিস আধিকারিকরাও। সীমান্তবর্তী এলাকার রেলস্টেশনগুলিতেও নজরদারি বাড়িয়েছে আরপিএফ। ফরাক্কা জংশন, আজিমগঞ্জ জংশন, মুর্শিদাবাদ, খাগড়াঘাট রোড, বহরমপুর কোর্ট, বেলডাঙা, রেজিনগর স্টেশনেও পুলিসি তৎপরতা বেড়েছে। 

    শুধু তৎপরতাই নয়, সীমান্তবাসীদের সঙ্গে নিবিড় জনসংযোগও শুরু করেছে বিএসএফ। আধিকারিকরা গ্রামে এসে মানুষজনকে সচেতন করছেন। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কি কি করণীয়, তা বোঝানো হচ্ছে। অনুপ্রবেশের দিকে কড়া নজর রাখতে বলা হচ্ছে। বিএসএফের তরফেও খোলা সীমান্তে বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। বিএসএফের এক আধিকারিক বলেন, ভারতের আক্রমণে পাকিস্তান দিশেহারা। যে কোনও সময় ওরা নতুন কিছু স্ট্র্যাটেজি নিতে পারে। তাই আমরাও প্রস্তুত রয়েছি। সীমান্তে বিএসএফ বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে খোলা সীমান্তে নজরদারি কয়েকগুণ বেড়েছে। আমরা আমাদের দেশের পূর্বদিকের সীমান্ত সুরক্ষিত করতে যাবতীয় ব্যবস্থা কার্যকর করেছি। 

    বৃহস্পতিবার জলঙ্গির চর কাকমারিতে পদ্মায় মাছ ধরতে নিষেধ করেছে বিএসএফ। জেলেদের নদীতে নামতে দেওয়া হয়নি। যার জেরে সীমান্তের নদীতে জীবিকা নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকেই। পদ্মার ওপারে রয়েছে বাংলাদেশ। দু’দেশের জেলেরা নদীতে মাছ ধরে। আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সবার সুরক্ষার তাগিদে। ভারতের দিক থেকে কোনও মৎস্যজীবীকে এদিন নদীতে নামতে দেওয়া হয়নি। 

    দক্ষিণবঙ্গ ফিশারম্যান ইউনিয়নের নেতা ফারুক মণ্ডল বলেন, আজ মাছ ধরতে যেতে বারণ করেছে বিএসএফ। পদ্মার শাখানদীতে মাছ ধরতে দিয়েছে। তবে, মূল পদ্মায় মাছ ধরতে দিচ্ছে না। কারণ ওপারে বাংলাদেশ। কোনও সমস্যা যাতে না হয়, সেদিকেই নজর রাখছে বিএসএফ।  লালগোলার বাসিন্দা রমেন শেখ বলেন, বিস্তীর্ণ খোলা সীমান্ত রয়েছে আমাদের এলাকায়। প্রতিবেশী বাংলাদেশকে মোটেও ভরসা করা যায় না। পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ওরা এদিকে কিছু করে বসে কিনা, সেটা নিয়ে তো দুশ্চিন্তা আছেই। এলাকায় বিএসএফের টহলদারি অনেক বেড়েছে। পুলিসও বিভিন্ন এলাকায় পেট্রোলিং করছে। তা সত্ত্বেও সন্ধ্যার পর থেকে একটু ভয় লাগছে। জলঙ্গির ঘোষপাড়ার বাসিন্দা নিমাই ঘোষ বলেন, এমন পরিস্থিতি তো আগে হয়নি। কার্গিলের যুদ্ধের সময় রেডিওতে ধারা বিবরণী শুনেছি। কিন্তু এখন মোবাইলে ও টিভিতে সবকিছু দেখতে পাচ্ছি। যা দেখে সত্যিই ভয় লাগছে। পাশের গ্রামই তো বাংলাদেশ। ওরা যদি পাকিস্তানকে সমর্থন জানাতে এখানে কিছু করে বসে, তা হলে সবথেকে বেশি ক্ষতি হবে আমাদের গ্রামে। বিএসএফ এলাকায় নিয়মিত টহল দিচ্ছে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)