নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে রাজ্য সরকারের দেওয়া আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির টাকা। বিভিন্ন সূত্র থেকে ব্লক প্রশাসনের কাছে সম্প্রতি ১৪টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। এরমধ্যে সাতটি অভিযোগ ভুয়ো হলেও, বাকি সাতজন ‘অযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যাতে টাকা তুলে নিতে না পারে, সেইজন্য খবর পেয়েই তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করে দেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যেই দু’জনের কাছ থেকে টাকা ফেরত নিতে পেরেছে শান্তিপুর ব্লক প্রশাসন। তবে এখনও বাকি পাঁচ ভুয়ো উপভোক্তার টাকা উদ্ধার করা যায়নি।
কেন্দ্রীয় সরকার দীর্ঘদিন আবাস যোজনার টাকা না দেওয়ার পর, সাধারণ মানুষকে বাড়ির টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। ২০১৯ সাল থেকে ধুলো পড়ে যাওয়া নামের তালিকা ঝাড়াই বাছাই করে ‘যোগ্য’ উপভোক্তা খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু করে প্রশাসন। পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও মাটির ঘর অথবা অস্থায়ী রান্নাঘর দেখিয়ে আবাসের টাকা নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল সেইসময়। কেউ মাটির রান্নাঘরে চৌকি পেতে সেটিকেই নিজের বাড়ি প্রমাণের মরিয়া চেষ্টা করেছিল। কেউ আবার পাশের কাঁচা বাড়ি নিজের বলে চালিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেছিল। এহেন ‘ঠগ’ বাছতে একাধিকবার ভেরিফিকেশনের পথে হাঁটতে হয় প্রশাসনকে। তাতে বহু ‘ভুয়ো’ উপভোক্তাকে চিহ্নিত করা গেলেও অনেকেই ফাঁকতালে টাকা পেয়ে যায়।
শান্তিপুর ব্লকের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ৪০২৩জনের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হওয়ার পরেও চিহ্নিত হয়েছে ১২২জন জাল উপভোক্তা। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়। এই সংখ্যা কেবলমাত্র নদীয়া জেলায় নয়, একটি ব্লকের নিরিখে রাজ্যের অন্যতম সর্বাধিক। তাতেই সাম্প্রতিকতম সংযোজন আরও ১৪জন উপভোক্তা। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সূত্র মারফত অভিযোগ জমা পড়ে বিডিও অফিসে। ফলে পুনরায় সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা যায়, তাদের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। তবে, বাকি সাতজন সত্যিই ‘অযোগ্য’ হওয়া সত্ত্বেও আবাসের প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা পেয়েছে। এই ধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি বাগআছড়া পঞ্চায়েতে। তালিকায় রয়েছে বাবলা-১ এবং নবলা-২ পঞ্চায়েত।
প্রশাসন সূত্রের খবর, চিহ্নিত হওয়ার পর দ্রুত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ‘ফ্রিজ’ করে দেওয়া হয় তাদের অ্যাকাউন্ট। এরপর টাকা ফেরতের জন্য তাদের চিঠি পাঠানো হয়। যারমধ্যে দু’জন ইতিমধ্যেই ব্লক প্রশাসনের কাছে টাকা ফিরিয়েছে। যদিও এখনও টাকা ফেরত দেয়নি পাঁচজন ‘অযোগ্য’ উপভোক্তা।
শান্তিপুর ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সন্দীপ ঘোষ বলেন, আমরা প্রত্যেককেই চিঠি পাঠিয়ে টাকা ফেরত দিতে বলেছি। দু’জন ফিরিয়েছেন। বাকিরা এখনও ফেরত দেননি। এঁদের প্রত্যেকের পাকা বাড়ি রয়েছে। অথচ সার্ভের সময় ভুল বুঝিয়ে নিজেকে উপভোক্তা প্রমাণ করেছিলেন। ওঁরা সেই টাকা ফেরত না দিলে আমরা কঠিন আইনি পদক্ষেপ নেব।
প্রসঙ্গত, শান্তিপুর ব্লকে ৩৮জন উপভোক্তা বিভিন্ন কারণে এখনও বাড়ির কাজ শুরু করতে পারেননি। তবে এক্ষেত্রে তাঁদের কারণ সঙ্গত। কারোর জমির সমস্যা রয়েছে। কারও পরিবারের লোকের আকস্মিক মৃত্যু, অথবা বাইরে থাকার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি। তাঁদের ক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত সময় দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় কিস্তির জন্য ইতিমধ্যেই যোগ্য চিহ্নিত হয়েছেন তিন হাজার জন। তাঁরা প্রথম কিস্তির টাকা খরচ করে লিনটেল পর্যন্ত গাঁথনি করেছেন।