• দেড় দশক বন্ধ পুরুলিয়া, হোমিওপ্যাথি কলেজ দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল, অধিগ্রহণের দাবি
    বর্তমান | ০৯ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: দেড় যুগ ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে পুরুলিয়ার একমাত্র হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজে বর্তমানে ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাস মদ্যপ, জুয়ারিদের আড্ডাস্থল হয়ে উঠেছে। অবিলম্বে হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল যাতে সরকার অধিগ্রহণ করে, সেই দাবি তুলতে শুরু করেছেন জেলার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে একাধিক নাগরিক সংগঠন। আজ ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে অবস্থান বিক্ষোভেরও ডাক দিয়েছে লোক সেবক সঙ্ঘ। 

    লোক সেবক সঙ্ঘের নেতা সচিব সুশীল মাহাত বলেন, হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চালুর ব্যাপারে আমরা লাগাতার আন্দোলন করে আসছি। পুরুলিয়ায় ঋষি নিবারণচন্দ্রের মূর্তির পাদদেশে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান সত্যাগ্রহ চালিয়েছি। আমাদের আন্দোলনের জেরে সরকার এই হাসপাতাল অধিগ্রহণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তু সরকার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। এর পিছনে বড়সড় চক্রান্ত রয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ (বন্ধ হওয়ার সময়ে এই পদে ছিলেন) মনীন্দ্রনাথ জানা বলেন, মেডিক্যাল কলেজ চালু করতে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চিঠি পাঠিয়েছিলাম। ২০১২ সালের ৩ ডিসেম্বর পুরুলিয়ার হুটমুড়ায় প্রকাশ্য প্রশাসনিক সভা থেকে এই কলেজটিকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে বলে ঘোষণাও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই ঘোষণারও একযুগ পেরিয়ে গিয়েছে। আজও জেলার একমাত্র হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চালু হল না। 

    জেলার স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৬৯ সালে পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে দুলমি এলাকায় হোমিওপ্যাথি হাসপাতালটি চালু হয়। ১৯৮০ সালে হাসপাতালের পাশাপাশি চালু হয় মেডিক্যাল কলেজও। শুরুতে ডিপ্লোমা কোর্স করানো হলেও ১৯৯৮ সাল থেকে ‘ব্যাচেলর অব হোমিওপ্যাথি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি’ কোর্স চালু হয়। জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মাধ্যমে ভর্তি শুরু হয়। যদিও ২০০৩ সাল থেকে কলেজে পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে থাকে। জয়েন্টের মাধ্যমে প্রতি বছর মোট ৫০ জন পড়ুয়া ভর্তি হওয়ার কথা থাকলেও ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল অব্দি চার বছরে মাত্র ৩৮ জন পড়ুয়াকে পাঠানো হয়। ২০০৮ সালে কলেজে পড়াশোনার উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকার যুক্তি দেখিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ ‘আয়ুষ’ এই কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দেয়। কলেজ বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইন্ডোর পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ করে দেওয়া হয় শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতনও। 

    প্রায় ৯ একর জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা এই কলেজ ও হাসপাতাল বর্তমানে ঝোপঝাড়ে ঢেকেছে। ভবনগুলির অবস্থাও শোচনীয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চুরি যাচ্ছে বহুমূল্য যন্ত্রপাতি। হাসপাতাল এখন সমাজবিরোধীদের আড্ডাস্থল। লোক সেবক সঙ্ঘের সুশীলবাবু বলেন, হাসপাতাল অধিগ্রহণের দাবিতে জঙ্গলমহলের প্রায় ১২ জন বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছিলেন বর্তমান সাংসদ। জেলাশাসকের দপ্তর থেকেপ্রায় তিনশ পাতার রিপোর্ট জমা পড়েছে নবান্নে। তারপরেও কোনও হেলদোল নেই রাজ্যের। এনিয়ে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, রাজ্যের তরফে সবুজ সংকেত এলেই এনিয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। অপেক্ষায় দিন গুনছেন জেলাবাসী।
  • Link to this news (বর্তমান)