নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: যদুবাবু বাজার চত্বরে লস্যির দোকান। পাগড়ি পরে বসে কয়েকজন। চলছে উত্তেজিত আলোচনা। তাঁদের কাছে অমৃতসর, জলন্ধর থেকে ব্ল্যাক আউটের খবর আসছে। একজন বললেন, ‘ওখানে তো আমাদের অনেক রিলেটিভ আছেন। তাঁদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখছি।’ একটি ভিডিও দেখিয়ে আর একজন বললেন, ‘কাল ভিডিও কল করেছিলাম। দেখি চারদিকে সব অন্ধকার। ওখানে জিনিসপত্রের দামও বেড়ে গিয়েছে। চিনি ৬০ থেকে ৭০ টাকা কিলো হয়ে গিয়েছে। সকাল
থেকে কেউ স্কুল যায়নি। অফিস যায়নি অনেকে।’ এই ম্রিয়মাণ আলোচনা অনেকের আবার ভালো লাগছে না। শিখ তরুণরা পাকিস্তান আক্রমণ করার ব্লুপ্রিন্টই যেন তৈরি করে ফেলেছেন। তরুণদের বক্তব্য, ‘আমাদের একবার ছেড়ে দিয়ে দেখুক। লাহোর পর্যন্ত নিয়ে চলে আসব।’ বয়স্করা উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করলেন। কয়েকজন প্রায় একসঙ্গে বললেন, ‘যুদ্ধ আমরা চাই না। কিন্তু পাকিস্তানকে সবক শেখানো দরকার। পুঞ্চে কী হল, সেটা তো দেখাই যাচ্ছে। কিন্তু বেটা, যুদ্ধ মানেই তো মানুষের মৃত্যু।’ একজনের যুক্তি, ‘আমাদের দেশ কিন্তু কোনও সাধারণ মানুষকে মারেনি। সাংবাদিক সম্মেলন থেকে তা বলে দেওয়া হয়েছে।’
যদুবাবু বাজার থেকে একটু দূরে ভবানীপুরের রাজেন্দ্র রোড। চেয়ার নিয়ে বসে ওম প্রকাশ। প্রবীণ ব্যক্তি। জিজ্ঞেস করা হল, ‘বাংলাদেশ যুদ্ধের কথা মনে আছে?’ ভারী চশমা দেওয়া ঘোলাটে চোখ তুলে বলেন, ‘খুব মনে আছে। সব অন্ধকার হয়ে যেত।’ রাজেন্দ্র রোড ধরে এগিয়ে গাঁজা পার্ক। শিখ সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস। সেখানে রাস্তাজুড়ে একাধিক জটলা। আলোচনা একটাই, ‘অমৃতসর’। একজন উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। বললেন, ‘আমাদের ছেড়ে দিলে, লাহোর দখল করে আসব।’ কর্তার সিং নামে এক প্রবীণ বলেন, ‘সেই অন্ধকার দিন ফিরে আসবে না তো? দেখতাম রাস্তার আলোগুলো, গাড়ির হেডলাইট সব কালো রং করে দিত। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ কিন্তু শান্তি চাই বাবুজি। বলবেন সবাইকে।’