• চিকেন’স নেকের নিরাপত্তার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র-ব্যবস্থা
    আনন্দবাজার | ০৯ মে ২০২৫
  • সাম্প্রতিক আবহে বাংলাদেশ, চিন, ভুটান ও নেপাল সীমান্ত ঘেরা এ রাজ্যের ‘চিকেন’স নেক’-কে সুরক্ষিত রাখতে প্রস্তুতিতে ত্রুটি রাখছে না ভারতীয় সেনা। বাহিনী সূত্রের দাবি, ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতকে জুড়ে রাখা প্রায় সাড়ে ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ শিলিগুড়ি করিডর বা ‘চিকেন’স নেক’ এলাকার নিরাপত্তার খাতিরে রাখা হয়েছে মাটি থেকে আকাশে ব্যবহারযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র (সারফেস টু এয়ার মিসাইল বা স্যাম) উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে রাশিয়ায় তৈরি ওই ‘স্যাম’ যেখানে রয়েছে (সাইট) সেখান থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং ড্রোনকে আকাশে ধ্বংস করা সম্ভব। প্রয়োজনের ভিত্তিতে তা অন্যত্র সরানোও যেতে পারে। বায়ুসেনার সঙ্গে সমন্বয়ে সেনাবাহিনীর কর্তারা সেটি নিয়ন্ত্রণ করছেন। বাংলাদেশ এবং চিন থেকে ‘চিকেন’স নেক’-এর উপরে নজরদারি বেড়েছে, এমন তথ্য মেলায় কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

    ভারতীয় সেনার ৩৩ কোর উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমের দায়িত্বে রয়েছে। বাহিনীর সদর দফতর সুকনায় সম্প্রতি একটি সমন্বয় বৈঠক হয়েছে। সেনার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “চিন তো ছিলই। বাংলাদেশ থেকেও কিছু নজরদারির খবর আসছে। তাতে আকাশপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি ছিল। এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা তাই তৈরি রাখা হয়েছে। ভারতীয় সেনা গোটা এলাকাকে সুরক্ষিত রেখেছে।” সেনা সূত্রের খবর, দেশের পাকিস্তান এবং চিন সীমান্ত লাগোয়া একাধিক এলাকায় এই ধরনের ‘মোবাইল স্যাম সাইট’ রয়েছে। যখন সীমান্তে শান্তির বাতাবরণ (পিস পিরিয়ড) থাকে, তখনও সেগুলি বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করা থাকে। কিন্তু সীমান্ত-পারে সাম্প্রতিক তৎপরতার খবর মেলায় বর্তমানে তেমন ‘সাইট’ রয়েছে উত্তরবঙ্গে।

    বাহিনী সূত্রের দাবি, সম্প্রতি মেঘালয় থেকে এ রাজ্যের জলপাইগুড়ি সীমান্ত অবধি বাংলাদেশের দিক থেকে আধুনিক ড্রোন ব্যবহার করে নজরদারির খবর রয়েছে। বাংলাদেশের লালমণিহাট এলাকায় নতুন এয়ারফিল্ড গড়া হয়েছে। সেখানে চিনের সামরিক বিমান নামার খবর মিলেছে। সিকিম লাগোয়া চিনের দিক থেকে হিমালয়ের উঁচু এলাকায় আধুনিক ড্রোন ব্যবহার করে নজরদারি, ডোকলাম মালভূমির কাছে উঁচু পাহাড়ে রাস্তা, ইয়ালুজাংবু এবং ব্রহ্মপুত্রের উপরে সীমান্ত ঘেঁষা সেতু, চুম্বি উপত্যকায় সেতু, রাস্তা, নাথু লার ও-পারে পাহাড় কেটে রাস্তা এবং পশ্চিম সিকিম লাগোয়া সীমান্ত-পারে প্রচুর বসতি গড়া হচ্ছে বলেও খবর।

    বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লা বাংলা টিম’ বা এবিটি (আল কায়দার উপমহাদেশীয় শাখা) এ রাজ্যে ‘স্লিপার সেল’ তৈরি করেছিল। সেনা-গোয়েন্দাদের দাবি, তাদের মতলব ছিল গোপনে সংগঠন বাড়ানো এবং শিলিগুড়ি লাগোয়া ‘চিকেন’স নেক’-এ নাশকতা চালানো। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে একাধিক মৌলবাদী নেতা ‘চিকেন’স নেক-কে নিশানা করা বা সেই সুবাদে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যকে দখল করার হুমকি দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নেয়নি সেনা বাহিনী। জলপাইগুড়ির জল্পেশ এলাকায় তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী সেনা ছাউনি। সেখান থেকে নজরদারির পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় অনুমোদনে উত্তরবঙ্গের কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র-ব্যবস্থার আয়োজনও হয়েছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)