• হামলার প্রত্যাঘাত অনিবার্য মেনেও যুদ্ধ চায় না কৃতী পরীক্ষার্থীরা
    আনন্দবাজার | ০৯ মে ২০২৫
  • এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বেরোনোর দিনটা অন্যান্য বছরের থেকে অনেকটাই আলাদা। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির কারণে বুধবার শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় চলেছে নিরাপত্তার ‘মক ড্রিল’। পহেলগামে জঙ্গি হামলার ঘটনার পরে ভারত প্রত্যাঘাত করায় এ বার পুরোদস্তুর যুদ্ধ বেধে গেলে কী হবে, তা ভেবে আতঙ্কিত শহর ও শহরতলির উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতী পরীক্ষার্থীরাও। এই পরিস্থিতিতে তাই ওরা জানিয়ে দিল, সন্ত্রাসবাদ বন্ধ হোক। তবে, যুদ্ধ তাদের কাছে কাঙ্ক্ষিত নয়।

    সোনারপুরের নয় নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, সোনারপুর বিদ্যাপীঠের ছাত্র তন্ময় পতি এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে পঞ্চম হয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৩। দু’বছর আগে মাধ্যমিকে ৬৭২ নম্বর পায় তন্ময়। কয়েকটি নম্বরের জন্য মেধা তালিকায় স্থান পায়নি। রিভিউ করানোয় প্রথমে পাঁচ নম্বর বাড়ে। তার পরে আরটিআই করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ায় আরও পাঁচ নম্বর বাড়ে। যদিও তন্ময়ের বাবা মানিককুমার পতি জানান, তাতেও সন্তুষ্ট নন তাঁরা। তাই আইনি লড়াই চালাবেন। এর মধ্যেই উচ্চ মাধ্যমিকে পঞ্চম স্থান পেল তন্ময়। মানিক জানান, পুরনো লড়াই চলবে। পাশাপাশি, উচ্চ মাধ্যমিকের ফলও পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হবে।

    বস্তির টালির চালের একচিলতে ঘরে বসবাস। বাবা পেশায় ফেরিওয়ালা। বস্তিরই একটি কোচিং সেন্টারে পড়ত সে। উচ্চ মাধ্যমিকে উর্দু বিভাগ থেকে প্রথম এবং সার্বিক ভাবে সপ্তম স্থান পেয়েছে হাওড়ার শিবপুর চওড়া বস্তির বাসিন্দা, সেই মহম্মদ সাজিদ হোসেন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯১। এই খবর জানার পরেই বাবা-মা, এক দিদি ও তিন ভাইকে নিয়ে চলা অভাবের সংসারে এ দিন ছিল উৎসবের আবহ। আনন্দে মেতে ওঠে শিবপুরের চওড়া বস্তিও। সাজিদ জানায়, তার ইচ্ছে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার পাশাপাশি ইউপিএসসি-র জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। ভবিষ্যতে আইএএস হওয়াই তার লক্ষ্য।

    ৪৯০ পেয়ে কলকাতার পাঠভবনের ছাত্র তথাগত রায় অষ্টম হয়েছে। গণিত অথবা পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়তে চায় সে। তথাগত জানাল, পাঠ্যবই ভাল করে পড়ার সঙ্গেই নিয়মিত টেস্ট পেপার সমাধান করেছে সে। পড়াশোনা বাদে সে তবলা বাজায়। বর্তমানে কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে তার মত, ‘‘যুদ্ধ পরিস্থিতি চাই না। কূটনৈতিক ভাবে সমস্যার সমাধান করা উচিত।’’

    বেহালা হাইস্কুলের কলা বিভাগের ছাত্র অঙ্কিত চক্রবর্তীও ৪৯০ পেয়ে অষ্টম হয়েছে। পরীক্ষার পরে ওই রকম নম্বর পাবে বলেই ভেবেছিল সে। ভবিষ্যতে আইন নিয়ে পড়ে কর্পোরেট আইনজীবী হতে চায় অঙ্কিত। সে জানাল, শুধু পাঠ্যবই নয়, খবরের কাগজ থেকে শুরু করে ম্যাগাজ়িন এবং টিভি, অনেক জায়গা থেকেই সে তার পড়ার উপাদান খুঁজে পেয়েছে। উত্তর দমদম পুরসভা এলাকার উদয়পুর হরদয়াল নাগ আদর্শ বিদ্যালয়ের ছাত্রী নবমিতা কর্মকারও ৪৯০ পেয়ে অষ্টম হয়েছে। নিমতার রবীন্দ্রপল্লি এলাকার বাসিন্দা নবমিতা বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করবে বলে জানিয়েছে। মেধা তালিকায় অষ্টমে আছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের দুই ছাত্র, অদ্রিজ গুপ্ত ও রাফিদ রানা লস্করও। দু’জনেই ৪৯০ পেয়েছে। মালদহের বাসিন্দা অদ্রিজ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের বাসিন্দা রাফিদও ২০২৩ সালে মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছিল। তাদের ইচ্ছে চিকিৎসক হওয়া। অষ্টম স্থানে আছে সোনারপুর সারদা বিদ্যাপীঠের ছাত্র ওম কুণ্ডুও। সে-ও ৪৯০ পেয়েছে।

    বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের সৃজিতা দত্ত ৪৮৯ পেয়ে নবম হয়েছে। সে ভবিষ্যতে অঙ্ক নিয়ে পড়তে চায়। সৃজিতা নিজে নোট তৈরি করত, তার জন্য ইউটিউবের সাহায্যও নিয়েছে সে। সৃজিতা বলল, ‘‘যুদ্ধ চাই না। সন্ত্রাসবাদীদের শেষ করতে হবে। তবে, কেউ আঘাত করলে প্রত্যাঘাতও করতে হবে।’’ টাকি হাউস গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজ়ের শৌনক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৪৮৯ পেয়ে নবম হয়েছে। ভবিষ্যতে সে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হতে চায়।

    উচ্চ মাধ্যমিকে একই নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে দুই যমজ ভাই। বাঁকুড়ার বাসিন্দা অনীক ও অনীশ বারুই নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের ছাত্র। উচ্চ মাধ্যমিকে দু’জনেই পেয়েছে ৪৮৯। দু’জনেই আছে মেধা তালিকার নবম স্থানে। ২০২৩ সালে মাধ্যমিকের মেধা তালিকাতেও জায়গা করে নিয়েছিল দুই ভাই। সে বার অনীশ হয়েছিল চতুর্থ। অনীক ষষ্ঠ। দু’জনেই চিকিৎসক হতে চায়।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)