• ২৭ বিমানবন্দর বন্ধ, কলকাতার আকাশে সেপারেশন ২.৫ মিনিট
    এই সময় | ০৯ মে ২০২৫
  • ধর্মতলা থেকে দু’টি মেজর রাস্তা বন্ধ। সমস্ত গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সমান্তরাল অন্য রাস্তায়। এই আবহে ওই সমান্তরাল রাস্তার যা হাল হবে, কলকাতার উপরে আকাশের ছবিটা এখন অনেকটা সেরকমই।

    মিয়ানমার থেকে যে ইন্টারন্যশনাল ফ্লাইট ভারত হয়ে ইউরোপ–আমেরিকা উড়ে যায়, এতদিন তাদের মেজর রুট ছিল দিল্লি-লাহোর। একটি নয়, একাধিক রুট রয়েছে কলকাতা ও দিল্লির আকাশপথে। পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢোকা যাচ্ছে না বলে ওই সব রুটই এখন বন্ধ।

    এতদিন সেই সব রুটে যে বিমানগুলি উড়ে যাচ্ছিল, সেগুলি এখন কলকাতা–মুম্বইয়ের একাধিক রুটে ভিড় করছে। আর তাতেই কলকাতার এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)–এর উপরে বাড়ছে চাপ। সেই চাপ সামলাতে আকাশে দু’টি বিমানের সামনে-পিছনের দূরত্ব অনেকটাই কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাতে অনেক বেশি বিমান একসঙ্গে উড়ে যেতে পারছে।

    ভারত–পাক দ্বৈরথে সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে এভিয়েশন সেক্টরে। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের বহু এয়ারলাইন্সকে এর ফলে ভুগতে হচ্ছে। অনেক ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে জলের মতো টাকা খরচ হচ্ছে। একের পর এক উড়ান বাতিল করতে হচ্ছে। বুধবার দিল্লি থেকে প্রায় দেড়শো উড়ান বাতিল হয়েছিল।

    বৃহস্পতিবার সারা দেশের ৪০০ উড়ান বাতিলের খবর এসেছে। তার মধ্যে কলকাতার প্রায় ১২টি উড়ান রয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশের ২৭টি বিমানবন্দর বন্ধ ছিল। বলা হয়েছে, কাল, শনিবার ১০ মে ভোর পর্যন্ত ওই বিমানবন্দরগুলি বন্ধ থাকবে। তারপরেও খুলবে কিনা, তা নির্ভর করবে তখনকার পরিস্থিতির উপরে।

    জানা গিয়েছে, কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার মূলত তিনটি রুট রয়েছে। একটি জামশেদপুর–খাজুরাহো হয়ে, একটি পাটনা হয়ে এবং আর একটি গয়া–বেনারস হয়ে। ওই রুটের বিমানগুলি এখন হয় কলকাতা থেকে জামশেদপুর–নাগপুর হয়ে মুম্বই যাচ্ছে, অথবা ভুবনেশ্বর থেকে নাগপুর হয়ে মুম্বই যাচ্ছে।

    সাধারণত, আকাশে একই উচ্চতায় সামনে–পিছনে দু’টি বিমানের মধ্যে কমপক্ষে ১০ মিনিটের দূরত্ব বা সেপারেশন রাখা হয়। কিন্তু, বাস্তব পরিস্থিতিতে সেই দূরত্ব রাখলে বিমান তার কাঙ্খিত উচ্চতা দিয়ে উড়ে যেতে পারবে না। তাতে জ্বালানি পুড়বে বেশি। এমনিতেই তাদের ঘুরে যেতে হচ্ছে।

    পুব আকাশ থেকে তাই ভারতে বিদেশি বিমান ঢুকলেই কলকাতা এটিসি সেই সেপারেশন কমিয়ে এখন প্রায় আড়াই মিনিট করে দিচ্ছে। সূত্রের খবর, কমার্শিয়াল ফ্লাইট ৪৫ হাজার ফুটের উপরে ওড়ে না। তার উপর দিয়ে বায়ুসেনার বিমান ওড়ে। প্রতিটি ফ্লাইটেরই একটি অপটিমাম হাইট থাকে। যার অর্থ ওই উচ্চতা দিয়ে যাওয়ার সময়ে সবথেকে বেশি ফুয়েল সাশ্রয় হয়। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশ থেকে যে ফ্লাইটগুলি ইউরোপ আমেরিকায় যাবে বলে রওনা দেয়, তারা যখন কলকাতার আকাশে ঢোকে, তখন তাদের পেট–ভরা জ্বালানি থাকে।

    সেই অবস্থায় সাধারণত ৩১ হাজার থেকে ৩৫ হাজার ফুট দিয়ে উড়ে যেতে চায় তারা। আবার ফেরার সময়ে, জ্বালানি যখন কম থাকে, তখন সাধারণত ৩৭ থেকে ৩৯ হাজার ফুট দিয়ে উড়তে চায়। এক কর্তার কথায়, ‘কিছু অঙ্ক থাকে। যার ভিত্তিতে পাইলট ওই হিসাব করেন। মাত্র দু’টি রুটে এতগুলি বিমানকে ১০ মিনিটের সেপারেশন দিলে, সবাইকে ওই কাঙ্খিত উচ্চতা দেওয়া সম্ভব নয়। তখন কাউকে অন্য উচ্চতা দিয়ে উড়ে যেতে হবে।’

    বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এতে একটি সমস্যাও হচ্ছে। মিয়ানমারের আকাশ থেকে আসা বিমান ভারতে ঢুকলে সঙ্গে সঙ্গে সেপারেশন কমিয়ে দিতে অসুবিধা হচ্ছে না। কিন্তু, কম সেপারেশনে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারছে না বিমান। কারণ, ১০ মিনিটের কম সেপারেশনে বিমানকে জায়গা দেওয়ার মতো টেকনোলজি সে দেশে নেই।

    তাই, পশ্চিম থেকে পুবের পথে কলকাতার আকাশ থেকেই ধীরে ধীরে সেপারেশন কমিয়ে দিচ্ছে কলকাতার এটিসি। মিয়ানমারে অবশ্য কোনও রুট বন্ধ নেই। তাই, ভারতের আকাশ ছেড়ে মিয়ানমারের একাধিক রুটে তারা কাঙ্খিত উচ্চতা পেয়ে যাচ্ছে।

    উল্লেখ্য, এরকম ওভারফ্লাইং খুব কম বিদেশি বিমানই বাংলাদেশের এটিসি–র পরিষেবা নেয়। মিয়ানমারের পরে সরাসরি কলকাতার এটিসি–র আওতায় ঢোকে তারা।

  • Link to this news (এই সময়)