হেমাভ সেনগুপ্ত, শান্তিনিকেতন
নাটকটি রবি ঠাকুর উৎসর্গ করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসুকে। ‘স্বদেশের চিত্তে নূতন প্রাণ সঞ্চার করবার পূণ্যব্রত’ সুভাষচন্দ্র গ্রহণ করেছন, ‘সেই কথা স্মরণ করে’। নাটকের কাহিনিতে আছে অদ্ভুত এক দেশের কথা, যেখানে কারও নিজস্ব সত্তা বলে কিছু নেই, যেখানে সবার মৌলিক চিন্তাভাবনা বিসর্জিত।
তবে এক রাজপুত্র ও তার বন্ধু সে দেশে যাত্রা করে সেখানকার অচলায়তন ভেঙে নতুন ব্যবস্থা শুরু করার চেষ্টা করবে, যা খুলে দেবে সবার নিজের নিজের পরিচয় ও মুক্তির পথ। সেই ‘তাসের দেশ’ নাটক আজ, পঁচিশে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকীর সন্ধ্যায় শান্তিনিকেতনের গৌর প্রাঙ্গণের অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
বিশ্বভারতীর স্কুল, শ্রীনিকেতনের ‘শিক্ষা সত্র’র ছাত্র–ছাত্রী, শিক্ষক–শিক্ষিকা মিলিয়ে ১০০ জনেরও বেশি অংশ নেবেন আজ সন্ধ্যার ‘তাসের দেশ’–এ। পরিচালক সৌমেন সেনগুপ্ত বলছেন, ‘তাসের দেশ নাটক মঞ্চস্থ করার প্রাচীন যে ধারা, আমরা তাকে ধরে রাখতে চেয়েছি।
রবীন্দ্রনাথ এই নাটকের মাধ্যমে নিয়মের অহেতুক বেড়াজাল, যা আমার সৃষ্টিশীলতাকে নষ্ট করছে, তার বিরুদ্ধে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন। সেটা আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছি।’ শিক্ষা সত্রের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ৯২ জন ছাত্র–ছাত্রী এই নাটকে অংশ নেবে।
বিশ্বভারতীর স্কুল, শ্রীনিকেতনের ‘শিক্ষা সত্র’র ছাত্র–ছাত্রী, শিক্ষক–শিক্ষিকা মিলিয়ে ১০০ জনেরও বেশি অংশ নেবেন আজ সন্ধ্যার ‘তাসের দেশ’–এ। পরিচালক সৌমেন সেনগুপ্ত বলছেন, ‘তাসের দেশ নাটক মঞ্চস্থ করার প্রাচীন যে ধারা, আমরা তাকে ধরে রাখতে চেয়েছি। রবীন্দ্রনাথ এই নাটকের মাধ্যমে নিয়মের অহেতুক বেড়াজাল, যা আমার সৃষ্টিশীলতাকে নষ্ট করছে, তার বিরুদ্ধে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন। সেটা আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছি।’ শিক্ষা সত্রের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ৯২ জন ছাত্র–ছাত্রী এই নাটকে অংশ নেবে।
ওই নাটক লেখা হয়েছিল ১৯৩৩ সালে, প্রথম বার মঞ্চস্থ হয়েছিল সে বছরের ১২ সেপ্টেম্বর, কলকাতার ম্যাডান থিয়েটার হল–এ। আজ শান্তিনিকেতনে ওই নাটকের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য সম্ভবত হতে চলেছে এর পোশাক। প্রথম বার মঞ্চস্থ হওয়ার সময়ে নাটকে যে পোশাক ব্যবহার করা হয়েছিল, তার ঐতিহ্যকে বজায় রেখেই এখনকার কিছু উপকরণ তাতে যুক্ত করে পোশাক তৈরি করা হয়েছে।
শিক্ষা সত্রের দুই প্রাক্তনী, শিল্পী স্নেহাশিস সেনগুপ্ত ও অক্ষয় ঘোষের তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছে পোশাক। নাটকের প্রাচীন পোশাক রীতিকে ধরে রাখতে আর্কাইভে থাকা পুরোনো ছবিগুলো দেখেছেন শিল্পীরা। তবে এতদিন আর্ট পেপার কিংবা মাউন্ট বোর্ডের উপর কারুকার্য করে তাসের দেশের পোশাক তৈরি হতো।
এ বার তার সঙ্গে কাপড় ও মিহি চট–ও ব্যবহার করা হচ্ছে। যাতে পোশাকগুলো ব্যবহার করা যায় পরবর্তী বেশ কয়েকটি শো–র জন্য। শিক্ষা সত্র কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আজকের অভিনয় শেষ হলে ৩৪টি নতুন পোশাক সংরক্ষণ করা হবে।
বিশ্বভারতী আর্কাইভ থেকে পাওয়া তথ্য জানাচ্ছে, প্রথম বার তাসের দেশের সাজসজ্জার পরিকল্পনার দায়িত্বে ছিলেন শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু ও প্রতিমা দেবী। নন্দলালের উপর ছিল পুরুষ চরিত্রগুলোর সাজসজ্জার দায়িত্ব, নারী চরিত্রদের পোশাকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রতিমা দেবী।
নারী চরিত্রগুলোর ক্ষেত্রে জাভা দ্বীপের (এখন ইন্দোনেশিয়ায়) নৃত্যশৈলীর বিভিন্ন ছবির সঙ্গে মিলিয়ে নতুন পোশাক ভাবনা তৈরি হয়। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র ভবনের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট (আলোকচিত্র অভিলেখাগার) শাশ্বতী কর্মকার বলেন, ‘তাসের দেশ নাটকে নন্দলালের পরিকল্পিত সাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল রংয়ের ছন্দসাম্য। পিচবোর্ডের উপর সাঁটা নানা রংয়ের কাগজ ও কাপড়ের উপর আলপনায় শিল্পাচার্য সে সব সাজপোশাক রচনা করেছিলেন। সেগুলো প্রতিটি চরিত্রের অলঙ্কার হয়ে উঠেছিল।’ নন্দলাল বসু ও প্রতিমা দেবী ছাড়াও সুরেন কর পোশাকের মধ্যে দিয়ে ‘তাসের দেশে’ রবি ঠাকুরের কল্পনাকে সার্থক রূপ দিয়েছিলেন।
আজ, পঁচিশে বৈশাখে বিশ্বভারতীর গৌর প্রাঙ্গণে ‘তাসের দেশে’র পোশাকে কিন্তু থাকবে এখনকার মৌলিক ও মুক্ত চিন্তাভাবনার ছাপও। নাট্যকার যার জয়গান গেয়েছেন বরাবর। এই নাটকে এবং তাঁর অন্য বহু সৃষ্টিতেও।