ভারত-পাক দুই যুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিল, কিন্তু এখন অপ্রাসঙ্গিক ডানলপ, মন খারাপ সেদিনের শ্রমিকদের...
আজকাল | ০৯ মে ২০২৫
মিল্টন সেন, হুগলি: পর পর দুই যুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিল ডানলপের এ্যারো টায়ার। প্রথমে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারতীয় বায়ুসেনা ব্যবহার করেছিল ডানলপ টায়ার। সেই টায়ার পুনরায় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানে ব্যবহার হয়েছিল ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের সময়। তখন ডানলপের টায়ার ব্যবহার করা হয়েছিল ভারতীয় সেনার গাড়িতেও। ব্যবহার করা হয়েছিল ওটিআর টায়ার। চলতি সময়ে, ২০২৫ সালে দেশে আবারও যুদ্ধ পরিস্থিতি। কিন্তু, অপ্রাসঙ্গিক সেই ডানলপের নাম। হতাশা শ্রমিক মহলে। দীর্ঘ সময় বন্ধ হয়ে রয়েছে সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা। গত ১৯৯৮ সালে হুগলির এই টায়ার তৈরির কারখানার মালিকানা হস্তান্তর হয় ছাবারিয়া গোষ্ঠীর হাতে। তখনই বন্ধ হয়েছিল কারখানা। পরবর্তী সময়ে ৯৯ সালে কার্গিলকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট হয় যুদ্ধ পরিস্থিতি। ১৯৭১ সালের পর ফের মুখোমুখি হয় ভারত পাকিস্তান। সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানায় তখন সবরকমের টায়ার উৎপাদন বন্ধ ছিল। যেহেতু শেষের দিকে শুধুমাত্র এ্যারো, ওটিয়ার টায়ারের পাশাপাশি তৈরি হতো অফ রোড টয়ারও। তাই বন্ধ কারখানার ভেতরে তখন অসংখ্য এ্যারো টায়ার এবং ওটিআর টায়ার মজুত ছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী তখন তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ডানলপ কারখানার থেকে সামরিক টায়ার নিয়ে যেতে। সেই অনুযায়ী ভারতীয় বায়ু সেনা ডানলপ কারখানার টায়ার নিয়ে গিয়েছিল।
তৎকালীন যুদ্ধের সময়ে ডানলপ কারখানায় উৎপাদিত এ্যারো টায়ার নেওয়া হয়েছিল ভারতীয় যুদ্ধ বিমানের জন্য। পাশাপাশি যুদ্ধে ওটিয়ার টায়ার ব্যবহার করা হয়েছিল ট্যাঙ্কার, বোফর্স কামানে। তখন ডানলপ কারখানায় এ্যারো টায়ারের কারিগর ছিলেন মধু শর্মা। তিনি বলেছেন, "তখন কারখানা বন্ধ ছিল। শ্রমিকদের অবস্থাও ছিল খুব খারাপ। তবুও যুদ্ধের কথা ভেবে তাঁরা টায়ার দেওয়া হয়েছিল।"
সেই সময়ে শুরুতে শ্রমিকরা কারখানা থেকে টায়ার বের করার ক্ষেত্রে রাজি ছিল না। কিন্তু রাজ্যের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত বলেছিলেন, "দেশের স্বার্থ আগে।" তাই সেদিন কারখানার গেট খুলে টায়ার বের করে দেওয়া হয়েছিল। এয়ারফোর্সের জওয়ানরা ট্রাক ভরে টায়ার নিয়ে গিয়েছিল সাহাগঞ্জ থেকে। সেদিন ডানলপ কারখানার শ্রমিকরা গর্বিত হয়েছিল। কারণ, তাঁরা সরাসরি যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত না হয়েও টায়ার তৈরী করে পরোক্ষভাবে যুদ্ধের শরিক হতে পেরে ছিলেন।
বর্তমানে সেই ডানলপ কারখানা কঙ্কাল সার অবস্থা। চারদিকে জঙ্গলে পরিপূর্ণ। কারখানা থাকলেও সবই চুরি হয়ে গিয়েছে, কিছুই নেই। খালি জমি পড়ে আছে। শ্রমিক অসীম কুমার বসু বলছিলেন, "তখন ডানলপ কারখানায় শ্রমিকরা দেশের স্বার্থ দেখেছিলেন। কারখানা বন্ধ থাকা অবস্থাতেও বেতন না পেয়েও তখন সবাই কাজ করেছিল। কারখানা থেকে টায়ার বের করে দিয়েছিল। তখন ভারতীয় বায়ু সেনার আধিকারিকেরা কারখানা থেকে সেই টায়ার নিয়ে গেছিলেন। তখন শুধু এয়ারক্রাফটের টায়ার ছাড়াও নৌসেনার জন্য জাহাজের ভি বেল্টও যোগান দিয়েছিল ডানলপ। সেই ডানলপ কারখানা লিকুইডেশানে চলে যাওয়ার পর আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।" এখন অসীম বাবুর বয়স হয়েছে। তবে তিনি আজও প্রয়োজনে কাজ করতে রাজি। তিনি চান আগে দেশ বাঁচুক, মানুষ বাঁচুক।