• পুরীর মতো মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরে বসবে নীলচক্র
    এই সময় | ০৯ মে ২০২৫
  • এই সময়, শ্রীরামপুর: পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মতো এ বার মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায় বসবে নীলচক্র। মাহেশ জগন্নাথ জিউ ট্রাষ্টি বোর্ডের সম্পাদক পিয়াল অধিকারী জানিয়েছেন, অষ্টধাতু দিয়ে মোট চারটি নীলচক্র তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি বসবে মূল মন্দিরের চূড়ায়। বাকিগুলো নাট মন্দিরে স্থাপন করা হবে।

    কোনও একটা শুভ দিন দেখে ধর্মীয় রীতি ও আচার মেনে মাহেশ জগন্নাথ মন্দিরে নীলচক্র বসানোর কাজ সম্পন্ন হবে। বৃহস্পতিবার পুরী থেকে নীলচক্র নিয়ে মাহেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা।

    পুরী জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায় যে গোল ধাতব চক্র দেখতে পাওয়া যায় সেটাকেই নীলচক্র বলা হয়। পুরাণের কাহিনী অনুযায়ী, এটি ভগবান বিষ্ণুর সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। পুরী জগন্নাথ মন্দিরের গর্ভগৃহে যা সুদর্শন চক্র নামে পূজিত হয়। সূর্যের অবস্থান বদলের সঙ্গে সঙ্গে তার রং পাল্টে যায়।

    সূর্যোদয়ের সময় তার রং থাকে সাদা। বেলা গড়ালেই সেটাই হয়ে যায় হালকা নীল। দুপুরের দিকে হয় গাঢ় নীল। আবার সূর্যাস্তের সময় হয়ে যায় বেগুনি। পুরী মন্দিরের নীলচক্রকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের মিথ রয়েছে। যেমন, নীলচক্রের একদম শীর্ষে যে পতাকা লাগানো থাকে সেটি সর্বদা বাতাসের বিপরীত দিকে ওড়ে।

    পাখি, বিমান অথবা অন্য কোনও উড়ন্ত জিনিস সচরাচর নীলচক্রের উপর দিয়ে উড়ে যায় না। তাই পুরী জগন্নাথ মন্দিরে নীলচক্রের বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। এতদিন মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরে কোনও নীলচক্র ছিল না। পুরী মন্দিরের সঙ্গে সাজুয্য বজায় রেখে এ বার মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরেও নীলচক্র বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাহেশ জগন্নাথ জিউ ট্রাষ্টি বোর্ড।

    মাহেশ জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান সেবায়েত সৌমেন অধিকারী বলেন, ‘বহুকাল আগে মাহেশের মন্দিরে নীলচক্র ছিল বলে শুনেছি। কালের স্রোতে সেটি উধাও হয়ে যায়। ভক্তদের ধর্মীয় ভাবাবেগের কথা চিন্তা করে পুরী থেকে নীলচক্র এনে মাহেশের মূল মন্দির ও নাট মন্দিরে স্থাপন করা হবে। সেদিন জগতের মঙ্গল কামনায় মন্দিরে হোমযঞ্জ ও পুজাপাঠ অনুষ্ঠিত হবে।’

    মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য, রামকৃষ্ণ ও রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত মাহেশের রথযাত্রা এ বার ৬২৯ বছরে পড়বে। পুরীর পরেই শ্রীরামপুরের মাহেশের রথযাত্রায় সবথেকে বেশি লোকসমাগম হয়। সেই কারণে মাহেশকে নব নীলাচল বলা হয়। ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করেই মাহেশকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জগন্নাথ মন্দির, মাসির বাড়ি ও জগন্নাথ ঘাটের আমূল সংস্কার করা হয়েছে। তার সঙ্গে এ বার নতুন পালক যুক্ত হতে চলেছে।

    শোনা যায়, সাধক ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী গঙ্গায় ভেসে আসা নিমকাঠ দিয়ে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার বিগ্রহ তৈরি করেছিলেন। প্রথমে মন্দরটি ছিল গঙ্গার তীরে। পরে সেটি শ্রীরামপুরের জিটি রোডের পাশে স্থানান্তরিত হয়।

    মন্দিরের প্রথম মোহন্ত ছিলেন সাধক কমলাকর পিপলাই। তাঁর বংশধরেরাই বর্তমানে মন্দিরের সেবায়েতের দায়িত্ব পালন করছেন। মাহেশের রথের রশিতে টান দিতে এসেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পুরীতে প্রতি ১২ বছর অন্তর বিগ্রহের পরিবর্তন হলেও মাহেশে সেটা হয় না।

  • Link to this news (এই সময়)