জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: আজ শুক্রবার ২৫ বৈশাখ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী। এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি এখনও আমাদের কাছে চিরনতুন। তিনি আছেন আমাদের মনের অন্দরে। তিনি সুখে, দুঃখে, প্রেমে, আনন্দে সবসময়ই আছেন আমাদের হৃদমাঝারে।
তাঁর জ্ঞানের ভাণ্ডার অপরিসীম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান বাঙালীর সবসময়ের নিত্যসঙ্গী। হাসিতে-খুশিতে, আনন্দ-কান্নায়, ঘুরতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে সবসময়ই আমরা যাঁর গান গুনগুনিয়ে করি তিনি আমাদের মনের কবি, প্রাণের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রবি ঠাকুর সকল বিষয়ের গভীরে ঢুকে তার রস গ্রহণ করতেন। তাঁর অন্তরদৃষ্টি ছিল এতটাই প্রখর যে তিনি সমাজের আগে আগে চলতেন। এখনও পর্যন্ত তাঁর বাণী আমাদের প্রেরণার উত্স। সত্যের পথে চলতে, অন্যায়ের প্রতিবাদে, কেউ পাশে না থাকলেও একাই নিজের পথে এগিয়ে চলার বার্তা যিনি দেন, তিনি আমাদের প্রিয় কবি।
'চির নূতনেরে দিল ডাক পঁচিশে বৈশাখ।' আজ বাঙালীর সেই স্মরণীয় ও আবেগাশ্রিত পুন্যদিন পঁচিশে বৈশাখ। রবি ঠাকুর আজকের দিনে জন্মেছিলেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে। তারপর আশি বছর পর্যন্ত তিনি আবেগে, মননে, অনুভাবনায় বাঙালির জীবনকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। তিনি আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে, আমাদের সাহিত্যের সঙ্গে, আমাদের জীবনের প্রতিটি শোভনতম আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন।
তিনি শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি সমগ্র জাতির সমগ্র জীবনের আঁধার। নবযুগের বাঙালির সঙ্গীত তাঁরই দান। কটি সমুদ্রকে যেমন কোনো পাত্রে ধারণ করা যায় না, একটি আকাশকে যেমন মুঠিতে ধরা সম্ভব নয়, রবীন্দ্র-প্রতিভাকেও তেমনি কোনো সভায় উপস্থাপিত করা অসম্ভব।
রবি ঠাকুরের জন্মদিনে তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু মজার কথা আলোচনা করা যায়। একবার শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক নেপাল রায়কে রবি ঠাকুর একবার লিখে পাঠালেন, 'আপনি আজকাল কাজে অত্যন্ত ভুল করছেন। এটা খুবই গর্হিত অপরাধ। এ জন্য কাল বিকেলে আমার বাড়িতে এসে আপনাকে দণ্ড নিতে হবে।' এরফলে নেপালনবাবু খুবই চিন্তায় পড়ে যান। ভাবতে থাকেন কী জানি কী দণ্ড দেওয়া হবে। পরদিন একটা বেশ মোটা লাঠি হাতে প্রবেশ করলেন রবি ঠাকুর। নেপালবাবু যা দেখে বিস্মৃত, সন্ত্রস্ত ও ভীত হয়ে যান। রবিঠাকুর ওদিকে লাঠিটি নেপালবাবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন, 'এই নিন আপনার দণ্ড। সেদিন যে আমার বাড়িতে এসে ফেলে গেছেন, তা একদম ভুলে বসে আছেন!'
রবিঠাকুরের আর একটি মজার কথা, কবিগুরু একবার নাতবউ কমলাকে চিঠি লিখতে বসেছেন। সেই চিঠি খোলার আগে কমলার সে কী উত্সাহ! সেখানে তিনি যা লিখেছেন তা দেখে তো কমলা অবাক। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, 'কেমন গল্প? গল্পের মধ্যে কটা বিয়ে আছে? নেই? বিয়ে ভাঙাও নেই? ধুর ছাই, তুমি কোনো কর্মের না। একটা বিয়ে দিতে পারলে না?'
রবীন্দ্রনাথকে একবার এক ভদ্রলোক লিখলেন, 'আপনি কি ভূতে বিশ্বাস করেন?' কবির উত্তরে তিনি লিখলেন, 'বিশ্বাস করি বা না করি, তাদের দৌরাত্ম্য মাঝে মাঝে টের পাই-সাহিত্যে, রাজনীতিতে সর্বত্রই একেক সময় তুমুল দাপাদাপি জুড়ে দেয় এরা। দেখেছি। দেখতে ঠিক মানুষের মতো!'
আর একটি মজার কথা না বললেই নয়, একবার শান্তিনিকেতনে ওজন মাপার যন্ত্র আসে। তা দিয়ে ছেলেমেয়েদের ওজন মাপা হচ্ছিল। রবিঠাকুর তা অনেকক্ষণ ধরেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করছিলেন। একজনের ওজন মাপা শেষ হলে তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, 'কিরে তুই কত হলি?' মেয়েটি বলে তার ওজন হয়েছে দুমণ। মেয়েটির তখন বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। তাই রবিঠাকুর তাকে মজা করে বলেন, 'কিরে তুই এখনও দুই মণ! এখনও একমন হলি নে!'
রবিঠাকুর বিজ্ঞানকে ভালোবাসতেন তিনি বেশ কয়েকবার আইনস্টাইনের সঙ্গে দেখা করতেও যান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত তিনি বেশ কয়েকবার দেখা করতে গিয়েও দেখা পাননি তাঁর। একদিন চা-চক্রে যান এবং সেখানে গিয়ে তিনি তাঁর সঙ্গে নানান বিষয়ে কথা বলেন। তিনি চারবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। তাঁর লেখা কবিতা, গান, গল্প, নাটক, উপন্যাস যেমন বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছে তেমনই তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ক নানান কাজ সকলকে অবাক করেছে বারংবার। তাই তো তিনি বিশ্বকবি। আজ তাঁর জন্মদিনে তাঁকে প্রণাম জানাই।