• তসলিমা নাসরিনের পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে কোনও বাধা নেই বলে লিখিত জানাল বিদেশ মন্ত্রক, কিন্তু লেখিকা নিজে কী চাইছেন?
    আনন্দবাজার | ০৯ মে ২০২৫
  • বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিনের পশ্চিমবঙ্গ বা কলকাতায় ফেরার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই বলে লিখিত ভাবে জানাল ভারত সরকার। বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যকে লেখা চিঠিতে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিংহ এ কথা জানিয়েছেন। ভারত সরকারের তরফ থেকে তসলিমার গতিবিধিতে যে কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি, সে কথা তসলিমা নিজেও শুক্রবার আনন্দবাজার ডট কম-কে বলেছেন। ভারত-পাক সঙ্ঘাতের আবহে বাংলাদেশের বর্তমান নিয়ন্ত্রকদের সুর যখন কিছুটা পাকপন্থী, তখন তসলিমার বিষয়ে দিল্লির এমন চিঠি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই অনেকে মনে করছেন।

    সংসদের বাজেট অধিবেশনে তসলিমার প্রসঙ্গ রাজ্যসভায় তুলেছিলেন শমীক। বাঙালি লেখিকা হওয়া সত্ত্বেও তিনি কেন বাংলায় তথা কলকাতায় থাকতে পারবেন না, তা নিয়ে বিজেপি সাংসদ জ়িরো আওয়ারে প্রশ্ন করেন। তসলিমাকে কলকাতায় ফেরানোর ব্যবস্থা করার দাবিও তুলেছিলেন তিনি। সেই দাবির প্রেক্ষিতেই কেন্দ্র তাদের অবস্থান স্পষ্ট করল। শুক্রবার শমীকের হাতে যে চিঠি পৌঁছেছে, তাতে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘আমরা আপনার উদ্বেগ সম্পর্কে অবহিত হয়েছি। আপনাকে জানাতে চাই, তসলিমা নাসরিনকে উপযুক্ত শ্রেণি তথা সময়সীমার জন্য ভারতীয় ভিসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান বিধির শর্ত মেনে তিনি ভারতের যে কোনও স্থানে যেতে পারেন।’’

    নিজের দেশ বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে ঢুকতে পারেননি তসলিমা। ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পরে বেশ কয়েক বছর কলকাতায় ছিলেন। কিন্তু ১৮ বছর আগে কলকাতায় তসলিমার বিরুদ্ধে হিংসাত্মক বিক্ষোভ ছড়ানোয় তাঁকে কলকাতা ছাড়তে ‘বাধ্য’ করা হয়েছিল। তার পরে বেশ কয়েক বছর ভারতে থাকার অনুমতিও তিনি পাননি। পরে আবার ভারতে ফেরেন। থাকার অনুমতিও পান। কিন্তু কলকাতা তাঁর জন্য ‘দুর্গম’ই থেকে গিয়েছে।

    শুক্রবার, রবীন্দ্রজয়ন্তীতে বাঙালি লেখিকার বঙ্গবাসে নিষেধাজ্ঞা না থাকার চিঠি পেয়ে শমীকের মুখে রবীন্দ্রনাথের পঙক্তি। তিনি বলছেন, ‘‘...জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর, আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী, বসুধারে রাখে নাই খণ্ড ক্ষুদ্র করি... ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত।’’ শমীকের কথায়, ‘‘তসলিমা একজন বাঙালি লেখিকা। তিনি বাংলায় লেখেন। তাঁর পাঠকেরা বাঙালি। তাঁকে বছরের পর বছর বাংলা থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করা হবে কেন? যাঁদের জন্য লেখেন, তাঁদের মাঝে কেন বাঁচতে পারবেন না? আমি এই প্রশ্নই রাজ্যসভায় তুলেছিলাম। ভারত সরকারকে ধন্যবাদ। তারা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিল, তসলিমার কলকাতায় ফেরার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই।’’

    তসলিমার কী বক্তব্য? আনন্দবাজার ডট কম-কে তিনি বলেছেন, ‘‘ভিসা বলুন বা রেসিডেন্ট পারমিট, আমাকে যেটা দেওয়া হয়েছে, তাতে সত্যিই ভারতের কোথাও যেতে বাধা নেই। আমি রাজস্থান যাচ্ছি, ওড়িশা যাচ্ছি, তামিলনাড়ু যাচ্ছি, কেরল যাচ্ছি। আমাকে কেউ বাধা দেন না।’’ তিনি পশ্চিমবঙ্গে থাকলে অশান্তি হবে বলে তসলিমা মনে করেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কি যেতে ইচ্ছা করে না? কলকাতা বইমেলায় আমার বই বেরোয়, পাঠকেরা আমার বই কেনেন। তাঁদের মাঝে গিয়ে সময় কাটাতে আমার খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু আমি যাওয়ার পরে যদি কেউ কিছু ঘটান, তাতে মুখ্যমন্ত্রী যদি কোনও পদক্ষেপ করেন, তা হলে কী হতে পারে, আমি নিশ্চিত নই। তাই যাচ্ছি না।’’ তসলিমা আরও বলেন, ‘‘আমি যখন কলকাতায় থাকতাম, তখন তো কোনও নিরাপত্তার প্রয়োজন হত না। কিন্তু এখন কলকাতায় আমার উপস্থিতির খবর পেলে কেউ কোনও অশান্তি করবেন কি না, তা তো বলতে পারি না। আমার জন্য কোথাও অশান্তি হোক, তা আমি চাই না।’’

    তসলিমা কলকাতায় আসুন বা না-আসুন, চলতি পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তসলিমার বিষয়ে ভারত সরকারের এই চিঠি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে শমীকের অভিমত। তাঁর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে এবং বাংলাদেশে এখন যে আবহ, তাতে আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি, আমাদের বহুত্ব বিপদের মুখে। এই রকম একটা সময়ে বিদেশ মন্ত্রকের এই অবস্থান অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতের অন্য যে কোনও প্রান্তের মতো বাংলাও যে সকলের, ভারত সরকারের চিঠিতে তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)