• প্রথম দশে দুই, খুশি দুই জেলা
    আনন্দবাজার | ০৯ মে ২০২৫
  • মাধ্যমিকে এ বছর দার্জিলিং তথা শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি জেলা থেকে মেধা তালিকায় কেউ ছিলেন না। সেই হতাশা কাটল উচ্চ মাধ্যমিকে। জলপাইগুড়ি জেলা থেকে সম্ভাব্য সপ্তম এবং শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলা থেকে রাজ্যে সম্ভাব্য দশম স্থানে রয়েছেন দুই ছাত্রী। কোয়েল গোস্বামী এবং মৌসুমী পাল। দু’জনেই গ্রামীণ এলাকার স্কুলের পড়ুয়া। অভাবের সঙ্গে লড়়াই করে ভাল ফল করেছেন তাঁরা।

    উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যের মেধা তালিকায় সপ্তম স্থান অধিকার করে জেলার মুখ উজ্জ্বল করলেন জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের কচুয়া বোয়ালমারি হাইস্কুলের ছাত্রী কোয়েল। কঠিন দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে কোয়েল ৪৯১ পেয়েছেন। আর শিলিগুড়ির বিধাননগরের মুরলিগঞ্জ হাই স্কুলের ছাত্রী মৌসুমী মেধা তালিকায় সম্ভাব্য দশম। শিক্ষা দফতরের শিলিগুড়ির এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মাধ্যমিকে মেধা তালিকায় না থাকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছিল। এ বার অন্তত মুখরক্ষা হয়েছে।’’

    কোয়েলের বাবা অশোক গোস্বামী পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষক। দরমার বেড়া দেওয়া টিনের ঘরে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার তাঁর। সংসারে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’। মেয়ের সাফল্যে খুশি বাড়ির সবাই। কোয়েলের বাড়িতে গিয়ে সংবর্ধনা জানিয়েছেন জলপাইগুড়ি সদর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিনয় রায়। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক বালিকা গোলে বলেন, ‘‘কোয়েলের সাফল্যে খুশি আমরা। জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছে সে।’’

    মৌসুমীর বাবা বকুল পালের বাড়িতে ছোট ব্যাটারির ব্যবসা। তা দিয়ে কোনওর কমে চলে চার জনের সংসার। ন্যায়-বিচারের জন্য লড়াই করতে আগামী দিনে আইনজীবী হতে চান মৌসুমী। কিন্তু বাধা অনটন। স্কুলের তরফে পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। মৌসুমীর ফলে খুশি স্কুলের শিক্ষক, পড়ুয়ারাও। মুরালিগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সামসুল আলম বলেন, ‘‘অভাবের সঙ্গে লড়াই করেও ভাল করা যায়, মৌসুমী তার প্রমাণ। সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েদের কাছে সে অনুপ্রেরণা।’’

    কেমন ছিল তাঁদের লড়াই?

    ধরাবাঁধা নিয়মে পড়াশোনা ছিল না বলে জানিয়েছেন কোয়েল। পড়াশোনার সঙ্গে স্কুলের সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে কোয়েলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে স্কুল সূত্রের খবর। কোয়েল বলেন, ‘‘ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে কলেজ শিক্ষিকা হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।’’ কোয়েলের ফল নিয়ে স্কুল যথেষ্টই আশাবাদী ছিল বলে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক জিতেন্দ্র নাথ সরকার জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আগামী দিনেও আমরা সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।’’

    এ দিন ভোর থেকেই ভারতের প্রত্যাঘাত নিয়ে চারদিকে হইচই। সেই প্রসঙ্গে মৌসুমীর বক্তব্য, ‘‘ভারত উচিত শিক্ষা দিয়েছে। কয়েক দিন ধরেই পহেলগামের ঘটনা নিয়ে মনমরা ছিলাম।’’ যুদ্ধের আবহ প্রসঙ্গে কোয়েল কথা, ‘‘দেশের সেনাবাহিনীর প্রতি ভরসা রয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)