জাতীয় শিক্ষানীতি রাজ্যগুলির উপর চাপিয়ে দিতে পারি না: সুপ্রিম কোর্ট
বর্তমান | ১০ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০’ কোনও রাজ্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না। এমনকী তা মেনে চলার জন্য কোনও রাজ্যকে বাধ্যও করতে পারে না আদালত। দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সম্মান জানিয়ে শুক্রবার এমনই একটি ঐতিহাসিক ‘রায়’ দিল সুপ্রিম কোর্ট। এই ইস্যুতে দিল্লিনিবাসী তামিল বিজেপি নেতা জি এস মণির করা মামলা খারিজও করে দিয়েছে বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ। জাতীয় শিক্ষানীতির আড়ালে হিন্দি ভাষাকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে—এমনই অভিযোগ তুলেছে তামিলনাড়ুর এম কে স্ট্যালিন সরকার। এব্যাপারে সহমত কেরলও। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি এই নিয়ে এককাট্টা। জাতীয় শিক্ষানীতি চাপিয়ে দেওয়ার বিরোধী পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারও। বাংলা, তামিলনাড়ু এবং কেরলকে নিশানা করেই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই বিজেপি নেতা। তাঁর আর্জি ছিল, ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে জাতীয় শিক্ষানীতি রূপায়ণে রাজ্যগুলিকে বাধ্য করুক কেন্দ্র। সেই আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
মামলাকারীর মূল দাবি ছিল, জাতীয় শিক্ষানীতির ত্রিভাষা সূত্রটি বিশেষভাবে কার্যকর করতে হবে। হিন্দির আগ্রাসনের অজুহাত দিয়ে তিনটি রাজ্য ছাত্রছাত্রীদের বিনামূ্ল্যে ভাষাশিক্ষার বিরোধিতা করছে। বিচারপতিরা সাফ জানান, মামলাকারী তামিল হলেও দিল্লির বাসিন্দা। তাই তামিলনাড়ুতে জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। ফলে মামলাকারী হিসেবে তাঁর অধিকার নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। পাশাপাশি বিচারপতিরা এও বলেন, এই নীতি কার্যকর করা বা না করায় যদি কারও মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়, তাহলেই তাতে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে। রাজনৈতিক মহলের মতে, কেন্দ্র তথা বিজেপি যেভাবে জাতীয় শিক্ষানীতি রাজ্যগুলির উপর চাপিয়ে দিতে চাইছে, সেই প্রচেষ্টায় বড়সড় আঘাত সুপ্রিম কোর্টের এই রায়। এক্স হ্যান্ডলে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। লিখেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাজ্যের অবস্থানই সঠিক বলে প্রমাণিত হল। কেন্দ্র মৌলিক ভিত্তি ঠিক করে দিতে পারে। তবে, শিক্ষানীতি রাজ্যের উপরই ছাড়া উচিত। এটা দেশের বৈচিত্র্য রক্ষার জন্যই প্রয়োজনীয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কতটা এগিয়ে, তা রাজ্যের পৃথক শিক্ষানীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্তে প্রমাণিত।’
জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন করা অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুণকান্তি নস্করও শীর্ষ আদালতের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষা আগে রাজ্যের বিষয়ই ছিল। জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা সরকার সেটিকে যৌথ তালিকাভুক্ত করে। বর্তমান মোদি সরকার শিক্ষাকে স্রেফ কেন্দ্রীয় বিষয় বলেই চালাতে চাইছে। শিক্ষার বেসরকারিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ এবং সাম্প্রদায়িকীকরণের নীল নকশা প্রস্তুত করেছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি পর্যালোচনার জন্য রাজ্য সরকার পৃথক কমিটি গঠন করে। সেখান থেকে নির্যাস নিয়ে তৈরি হয় রাজ্য শিক্ষানীতি। চালু হয়েছে চার বছরের স্নাতক কোর্স, অনার্স উইথ রিসার্চ ডিগ্রি, উচ্চ মাধ্যমিকে সেমেস্টার পদ্ধতি, হোলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড তথা হোলিস্টিক এডুকেশন। এর মধ্যে স্নাতকস্তরের বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের আপত্তি ছিল। কিন্তু পড়ুয়ারা সর্বভারতীয় স্তরে বৈষম্যের সম্মুখীন হতে পারে বলে গৃহীত হয়েছে।