এই সময়: ট্রেনের ট্র্যাকে বসে পড়ে ট্রেনের চাকা আটকে দেওয়ার ফল এ বার অর্থমূল্যে চোকাতে হবে অবরোধকারীদের। বহু দিন ধরে ট্রেন অবরোধ না–করার জন্য আবেদন করে কোনও ফল না পাওয়ায় এ বার কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটছে ভারতীয় রেল।
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ট্রেন অবরোধের ঘটনা ঘটলেই যাঁরা অবরোধ করছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে আদালতে নিয়ে গিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হবে। ইতিমধ্যেই আলিপুরদুয়ার এবং মালদায় দু’টি এমন মামলায় অভিযুক্তদের থেকে ৫ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে রেল।
লোকাল ট্রেনে মহিলা কামরার সংখ্যা দুই থেকে বাড়িয়ে তিন করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায়। পর পর তিনদিন সব মিলিয়ে বেশ কয়েক গণ্টা অবরোধের জেরে প্রতিদিনই পূর্ব রেলকে বাতিল করতে হয়েছিল গড়ে ২০টি করে লোকাল ট্রেন।
ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে কেন্দ্রের নীতির প্রতিবাদে ধুলিয়ান গঙ্গা ও আজিমগঞ্জ স্টেশনের মাঝে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দু’দিন।
কয়েক বছর আগে সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে আন্দোলন এই রাজ্যে এতটাই প্রবল হয়েছিল যে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে জনরোষের প্রভাবে প্রথমে ট্রেন অবরোধ এবং তারপর ট্র্যাকের উপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনে আগুন দেওয়ার ফলে পুড়ে ছারখার হয় গোটা ট্রেনটি। ভয়াবহ উত্তাপে জায়গায় জায়গায় গলে গিয়েছিল ট্র্যাক।
এই জাতীয় বড় ঘটনা বাদ দিলেও কখনও কোনও জায়গায় স্টেশন তৈরির দাবিতে অবরোধ, কোথাও লেডিজ় স্পেশ্যাল ট্রেনে পুরুষদের উঠতে দেওয়ার দাবিতে এবং অন্য অনেক অজুহাতে অবরোধ লেগেই থাকে।
ভারতীয় রেলের হিসেব অনুযায়ী ২০২৩–২৪ অর্থবর্ষে পূর্ব রেল, দক্ষিণ–পূর্ব রেল এবং উত্তর–পূর্ব সীমান্ত রেলের যে ডিভিশনগুলো রয়েছে, তার সব ক’টা স্টেশন মিলিয়ে মোট ৭৮ দিন অবরোধ হয়েছে। অর্থাৎ গড়ে প্রতি পাঁচ দিনে একবার বাংলার কোনও না কোনও জায়গায় ট্রেন অবরোধ করা হয়েছে।
ভারতীয় রেলের আধিকারিকরা বলছেন, ‘ট্রেন অবরোধ হলে শুধু যে যাত্রীরা সময়ের অনেক পরে গন্তব্যে পৌঁছন তা–ই নয়, বিপুল ক্ষতি হয় ট্রেন পরিষেবারও। এই বিষয়টি যাত্রীদের বোঝানোর জন্য বহুবার নানা ধরনের সচেতনতামূলক প্রচার চলেছে। কিন্তু কোনও ফল হয়নি।
সম্প্রতি উত্তর–পূর্ব সীমান্ত রেল দু’টি আলাদা আলাদা অবরোধের ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে আলিপুরদুয়ার এবং মালদা সিভিল কোর্টে। উত্তর–পূর্ব সীমান্ত রেল জানিয়েছে, রেলের আইন অনুযায়ী ট্রেন অবরোধ ফৌজদারি মামলার আওতায় পড়ে। নিয়মমতো রেলরক্ষীবাহিনী সেই মামলা করেছে।
কিন্তু অবরোধের ফলে ট্রেন পরিষেবার যে ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য আলাদা করে দু’টি মামলা করা হয়েছে। উত্তর–পূর্ব সীমান্ত রেলের দেখানো পথই আগামী দিনে ভারতীয় রেলের বাকি জ়োনগুলো অনুসরণ করতে চলেছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
রেলের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কোনও রাজনৈতিক দল বা অন্য কোনও সংগঠনের নামে অবরোধ করা হলে সেই দল বা সংগঠনের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা করা হবে। যদি দল–মত নির্বিশেষে একদল মানুষ মিলে অবরোধে বসেন, তা হলে তাঁদের চিহ্নিত করে আলাদা করে মামলা রুজু করা হবে।