ওবিসি সংরক্ষণের গেরোয় রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে!
২ মে মাধ্যমিকের রেজ়াল্টের বেরোনোর পর পরই কলকাতার হিন্দু, হেয়ার, সংস্কৃত এবং বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের মতো জেলায় জেলায় ছড়িয়ে থাকা মোট ৬২টি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে কেন্দ্রীয় ভাবে অভিন্ন ভর্তি–পর্ব শুরু হয়েছিল।
রাজ্যের স্কুলশিক্ষা অধিকরণ বিভাগ ৩ থেকে ১০ মে পর্যন্ত ভর্তির আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। সেই মতো মেধার ভিত্তিতে আবেদনকারী পড়ুয়াদের আর্টস, সায়েন্স এবং কমার্সে কয়েক হাজার আসনে ১৩ মে ভর্তির মেরিট লিস্ট প্রকাশের কথা ছিল।
কিন্তু আবেদন প্রক্রিয়ার মাঝপথে আচমকাই স্কুলশিক্ষা অধিকরণ বিভাগের এক যুগ্ম অধিকর্তা সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক–শিক্ষাকাদের একাদশে ভর্তির মেধাতালিকা প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন।
তিনি এক বার্তায় উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধানদের জানিয়েছেন, ‘আপাতত সরকারি স্কুলগুলিতে ভর্তির মেধাতালিকা তৈরি ও প্রকাশ করা যাবে না। সে জন্যে সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করতে হবে।’ প্রসঙ্গত, মেরিট লিস্টে নাম থাকা পড়ুয়াদের ১৪ থেকে ১৯ মে, সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টে পর্যন্ত স্কুলে গিয়ে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল।
বিকাশ ভবনের নির্দেশে কলকাতা ও জেলায় ছড়িয়ে থাকা শতাব্দী প্রাচীন সরকারি স্কুলগুলির পাশাপাশি িনউ ইন্টিগ্রিটেড গভর্নমেন্ট স্কুল কর্তৃপক্ষও বিপাকে পড়েছেন। তবে এ ব্যাপারে স্কুলশিক্ষা কমিশনার ও সরকারি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম অধিকর্তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কথা বলা যায়নি।
সল্টলেকের বেগম রোকেয়া স্মৃতি বালিকা বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষিকা শুভলক্ষ্মী ভকতের কথায়, ‘উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির ক্ষেত্রে ওবিসি সংরক্ষণ কী ভাবে মানা হবে, তা নিয়ে অনেক প্রধান শিক্ষক–শিক্ষিকাই স্কুলশিক্ষা দপ্তর ও অধিকরণ বিভাগের মতামত জানতে চেয়েছিলেন। কারণ, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সরকারি স্কুলে সংরক্ষণ মেনে ছাত্রছাত্রী ভর্তি বাধ্যতামূলক। সে জন্যেই আধিকারিকরা মেধাতালিকা প্রকাশে নিষেধ করেছেন।’
বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের অ্যাসিস্ট্যান্ট মিসট্রেস ইনচার্জ শবরী ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম। তার পর বিকাশ ভবনের তরফে মেধাতালিকা আপাতত প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এখন দেখার কবে ও কোন পদ্ধতিতে মেরিট লিস্ট প্রকাশের নির্দেশ আসে।’ কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা প্রত্যুষা দে জানান, সরকারি স্কুলে ভর্তির জন্যে মেধাতালিকা তৈরি ও প্রকাশ করতে বারণ করা হয়েছে। আপাতত অপেক্ষা করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘বর্তমান আর্থ–সামাজিক পরিস্থিতিতে সরকারি স্কুলে এমনিতেই ছাত্রছাত্রীরা কম আসছে। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ছেড়ে সিআইএসসিই এবং সিবিএসই স্কুলে ভর্তির প্রবণতা বাড়ছে। আগেপ তুলনায় বহু সরকারি স্কুলেই উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ুয়া অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। তার পরেও ভর্তি নিয়ে এই রকম দ্বিধা, দ্বন্দ্বে পড়ুয়ার সংখ্যা আরও তলানিতে ঠেকবে।’