এই সময়: ট্যাবলেট খাওয়ার সময়ে বোতল থেকে জল খেতে গিয়েছিলেন বৃদ্ধা। বুঝতে পারেননি, বোতলের ছিপিটাই গিলে ফেলেছেন! ভেবেছিলেন, ট্যাবলেট গলায় আটকে গিয়েছে বোধহয়। কষ্ট হওয়ায় যান স্থানীয় হাসপাতালে। কিন্তু আউটডোরেই আচমকা খাবি খেতে শুরু করেন। শুরু হয় ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট।
চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে বোঝেন, ল্যারিঙ্গসের দোরগোড়ায় ছিপিটি এমন ভাবে আটকে রয়েছে যে শ্বাসনালী প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এবং ছিপির যা অবস্থান, তাতে প্রথাগত ব্রঙ্কোস্কোপি বা ল্যারিঙ্গোস্কোপির সাহায্যে ‘ফরেন বডি’ বের করা দুষ্কর।
সময় নষ্ট না করে ঝুঁকি নিয়েই তখন কঠিন অপারেশনটি শুরু করেন যাদবপুরের কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি বিশেষজ্ঞ দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায়। বের হয় জনপ্রিয় নরম পানীয়ের বোতলের ছিপি। আপাতত ভালো আছেন লাহাসো দেবী নামে বছর আটষট্টির ওই বৃদ্ধা। দু’–এক দিনের মধ্যেই তাঁকে ছুটি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ঘটনা বুধবার সকালের। বাপুজিনগরের বাসিন্দা অবাঙালি ওই বৃদ্ধা ট্যাবলেট খেতে গিয়ে গলায় কিছু একটা আটকে যাওয়ায় ভেবেছিলেন, ট্যাবলেটটাই আটকে গিয়েছে। জল খেয়েও সমস্যার সুরাহা না হওয়ায় এবং কষ্ট বাড়তে থাকায় স্থানীয় কেপিসি হাসপাতালের ইএনটি আউটডোরে আসেন।
আর সেখানেই শুরু হয় প্রাণঘাতী শ্বাসকষ্ট। দম আটকে যায় তাঁর। দ্বৈপায়ন জানান, কালক্ষেপ না করে এন্ডোস্কোপি করা হয়। তাতেই বোঝা যায়, ট্যাবলেট নয়, শ্বাসনালীর দোরগোড়ায় আটকে বোতলের ছিপি।
ইএনটি–র ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘অজান্তে ছিপি গিলে শ্বাসরোধ হওয়ার উপক্রম—দীর্ঘ কেরিয়ারে এমন রোগী এই প্রথম দেখলাম। ভয় ছিল, ছিপিটি ফরসেপ দিয়ে বের করতে গেলে পিছলে শ্বাসনালীর আরও গভীরে না চলে যায়! তাই একটি হিঞ্জ ব্যবহার করে সন্তর্পণে সেটি বের করে নেওয়া হয় অল্প সময়ের মধ্যেই।’
তিনি জানান, কাজটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ, ছিপিটির অবস্থানের কারণেই শ্বাসনালীতে টিউব পরিয়ে অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়া যায়নি। ফলে গলার ওই অংশটি অবশ করে রোগিণী জেগে থাকা অবস্থাতেই (অ্যাওয়েক অ্যানাস্থেশিয়া) অপারেশনটি করা হয় সফল ভাবে। সময় নষ্ট না হওয়ার কারণেই এড়ানো গিয়েছে শ্বাসরোধ হয়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মতো প্রাণঘাতী বিপদ।