• মাথা উঁচু করে দাড়িঁয়ে পাক-বধের গর্বের ট্যাঙ্ক
    এই সময় | ১০ মে ২০২৫
  • চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার

    একটা যুদ্ধ চলছে দেশের পশ্চিম প্রান্তে। পূর্ব প্রান্তে অতীতের যুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে ভারতের পাক–বধের এক স্মারক। বছরের পর বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি সাঁজোয়া গাড়ি। এখন আর তার চাকা গড়ায় না, কিন্তু লোহার ট্যাঙ্ক এক অগ্নিযুগের ইতিহাস বলে চলে অনর্গল। কোচবিহারের সাগরদিঘির উত্তর পাড়ে গত কয়েকদিন কৌতূহলী মানুষের ভিড় বাড়ছে এই ট্যাঙ্ক ঘিরে।

    সালটা ১৯৭১। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে সম্মুখসমরে ছিল ভারত ও পাকিস্তান। সেই যুদ্ধে পাকিস্তান হার মেনেছিল। বাংলাদেশের বগুড়া থেকে সেই সময়ে একটি ট্যাঙ্ক নিয়ে আসা হয়েছিল কোচবিহারে। সেটাই ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর জয়ের স্মারক। ৫৪ বছর পরে ফের যখন ভারত–পাকিস্তানের লড়াই চলছে, তখন অতীতের ইতিহাসের দর্পণ হয়ে রয়ে গিয়েছে কোচবিহারের প্যাটন ট্যাঙ্ক।

    সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার নেতৃত্বে ভারত কুপোকাৎ করেছিল পাক বাহিনীকে। এরই সঙ্গে লক্ষ লক্ষ বাঙালির রক্তের সঙ্গে বিনিময়ে তৈরি হয়েছিল নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। যুদ্ধ শেষে আমেরিকার তৈরি প্যাটন ট্যাঙ্ক কোচবিহারের চিলা রায় আর্মি ব্যারাকে নিয়ে আসে সেনাবাহিনী। পরবর্তীতে নব্বই দশকের শেষ দিকে তা সাগরদিঘির উত্তর পাড়ে নিয়ে এসে বসানো হয়। সবুজ রঙের পোঁচ পড়েছে সাঁজোয়া গাড়ির গায়ে।

    সাদা হরফে লেখা ‘দ্য পাঞ্জাব রেজিমেন্ট’। এত বছর পার হয়ে গেলেও মাথা উঁচিয়ে রয়েছে এই ট্যাঙ্ক। এখন এটির রক্ষণাবেক্ষণ করে জেলা প্রাক্তন সৈনিক সঙ্ঘ। সেখানে তারা পরবর্তীতে শহিদ স্মারকও নির্মাণ করেছে। স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস–সহ বিশেষ দিনগুলি এই সাঁজোয়া গাড়ির সামনেই পালন করেন সঙ্ঘের সদস্যরা।

    এ ছাড়াও কোচবিহারে সাগরদিঘির চত্বরে যাঁরা বেড়াতে আসেন, এই ট্যাঙ্কের সামনে এসে থমকে যান। সেলফি তোলেন অনেকে। স্থানীয় মানুষজনের কাছ থেকে এই ট্যাঙ্কের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চান তাঁরা।

    দিঘির পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্যাঙ্ক বহু শহরবাসীকে নিয়ে যায় পুরোনো দিনে। স্থানীয় বাসিন্দারাও এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে থমকে যান। কোনও অতিথি বাড়িতে এলে তাঁকে দেখানো হয় এটি।

    প্রাক্তন সৈনিক সঙ্ঘের সম্পাদক তপন চৌধুরী বলেন, ‘আমি নৌবাহিনীতে ছিলাম। আইএনএস বিক্রান্তেও আড়াই বছর কাজ করেছি। পহেলগামে হামলার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই যুদ্ধ হওয়ারই ছিল। একাত্তরে আমরা যে পাকিস্তানকে হারিয়েছিলাম, সেটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় এই ট্যাঙ্ক।’

    কোচবিহার রয়্যাল ফ্যামিলি সাকসেসার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মুখপাত্র কুমার মৃদুল নারায়ণের বক্তব্য, ‘পাকিস্তানকে হারিয়ে এই ট্যাঙ্ক নিয়ে আসা হয়েছিল ভারতে। এটা আমাদের কাছে গর্বের বিষয়। রাজার শহর কোচবিহারের পুরোনো ইতিহাসের সঙ্গে এই ট্যাঙ্ক জড়িয়ে রয়েছে।’

  • Link to this news (এই সময়)