• সমস্যা মেটাতে এবার চাঁদা তুলে রাস্তা উদয়নগরের বাসিন্দাদের
    বর্তমান | ১১ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, ডোমকল: ভোট এলেই মেলে ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি। আর ভোট ফুরোলে প্রতিশ্রুতি আর নেতা দু’টোই ভ্যানিশ। নেতাদের আর পা পড়ে না চরের মাটিতে। জলঙ্গির বাংলাদেশ ঘেঁষা চর উদয়নগর খণ্ড কলোনির বাসিন্দাদের এই তিক্ত অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিনের। সেই অভিজ্ঞতা যে সত্যি, তা প্রমাণিত হলে আরও একবার। গ্রামের মধ্যে চলাচলের রাস্তা দিনের পর দিন কাদায় ডুবে থাকে। একাধিকবার রাস্তা তৈরির জন্য পঞ্চায়েত দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কাজ হয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে চাঁদা তুলে রাস্তা তৈরি করলেন উদয়নগরের বাসিন্দারা। নৌকায় পদ্মার সরু নালা পেরিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার বালিপথ উজিয়ে ঢুকতে হয় ওই চরে। চরের ওপারে বাংলাদেশ। মাঝে নেই কাঁটাতারের বেড়া। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এমনিতেই শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা থেকে তাঁরা বঞ্চিত রয়েছেন। কিন্তু সমস্যাটা তার থেকেও যে কারণে বড়, তা হল রাস্তা তৈরি না হওয়া। আজও মূল ভূখণ্ড থেকে চরে যাতায়াতের কোনও রাস্তা গড়ে ওঠেনি। ওই রাস্তা তাও বাদ দিলেও, চরের ওই গ্রামের চলাচলের রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ। এতদিনেও সেখানে তৈরি হয়নি মোরাম, কংক্রিট কিংবা কালো পিচের রাস্তা। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই জল জমে থাকে ওই রাস্তায়। হাঁটু পর্যন্ত কাদা মাড়িয়ে গ্রামের ভেতরের রাস্তায় চলাফেরা করে রীতিমতো দুষ্কর হয়ে ওঠে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ওই রাস্তা তৈরির জন্য পঞ্চায়েত প্রধানকে বলে আসছেন তাঁরা। তারপরেও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই পঞ্চায়েত প্রধানের। 

    ওই অঞ্চলের পঞ্চায়েত সদস্য আজাদ আলির দাবি, তিনিও একাধিকবার ওই রাস্তা তৈরি নিয়ে প্রধানের দ্বারস্থ হয়েছেন। তারপরেও কোনও চেষ্টা করেনি পঞ্চায়েত। ফলে একপ্রকারে বাধ্য হয়ে ওই পঞ্চায়েত সদস্য ও গ্রামবাসীরা মিলে চাঁদা তুলে মাটি দিয়ে মোটামুটিভাবে চলাফেরার মতো রাস্তা সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই মোতাবেক সবার আর্থিক সাহায্য ইতিমধ্যেই প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে রাস্তা তৈরির জন্য। 

    স্থানীয় বাসিন্দা আলম শেখ বলেন, কোনও নেতাই চরের মাটিতে পা দেন না। শুধু ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসেন, ভোট ফুরোলে আর তাঁদের পাত্তা পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে আমরা চাঁদা তুলে রাস্তা তৈরিতে হাত লাগিয়েছি। আমাদের মেম্বারও এগিয়ে এসেছেন। মেম্বার নিজে থেকে অনেকটা আর্থিক সাহায্য করেছেন, আর বাকিটা আমরা সবাই চাঁদা তুলে ওই রাস্তা তৈরির জন্য উদ্যোগী হয়েছি। তবে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির মতো সংস্থা থাকার পরেও আমাদের চাঁদা তুলে রাস্তা তৈরি করতে হচ্ছে এটাই লজ্জার ঘটনা। 

    এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য আজাদ আলি বলেন, অনেক জায়গায় ওই রাস্তা তৈরির জন্য ঘুরেছি। কিছুতেই কিছু হয়নি। প্রধান, এমএলএ কাউকে বলতে বাদ রাখিনি। তারপরেও কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমি নিজে থেকে কিছু টাকা ও বাকি সবাই মিলে চাঁদা তুলে গ্রামের রাস্তায় মাটি ফেলেছি। এতে অন্তত কাদার হাত থেকে কিছুটা হলেও বাঁচবে সাধারণ মানুষ। যদিও ঘোষপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ফিরোজ আলি বলেন, যিনি ওই রাস্তা তৈরি করছেন, উনি আমাদের তৃণমূলের সদস্য। আমরা পঞ্চায়েতের তরফে ওই এলাকায় রাস্তা তৈরির চেষ্টা করব।
  • Link to this news (বর্তমান)