শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে সমবায়ে ১০ কোটি আত্মসাতের অভিযোগ, ধৃত
বর্তমান | ১১ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের খারুই-গঠরা সমবায় সমিতিতে ১০ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা তছরুপের ঘটনায় অভিযুক্ত ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করল পুলিস। ধৃতের নাম অশোককুমার সামন্ত। বাড়ি শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের উত্তর মির্জাপুর গ্রামে। শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে তমলুক থানার পুলিস। শনিবার ধৃতকে তমলুক সিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক চারদিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দেন। তমলুক থানার আইসি সুভাষচন্দ্র ঘোষ বলেন, গত মার্চ মাসে ওই সমবায় সমিতির সম্পাদক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে এফআইআর করেছিলেন। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ খারুই-গঠরা সমবায় সমিতির সম্পাদক অভয়কুমার খাঁড়া ওই ম্যানেজারের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিলেন। অভিযোগ, সমিতির ফিক্সড ডিপোজিট থেকে লোন, টার্ম ডিপোজিট, সেভিংস অ্যাকাউন্ট, কারেন্ট অ্যাকাউন্ট এবং সমিতির সুদের সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। অডিটে ওই তছরুপের ঘটনা সামনে আসতেই হইচই পড়ে যায়। অভিযুক্তের থেকে টাকা ফেরানোর জন্য চাপ বাড়ানো হয়। অভিযুক্ত ম্যানেজার নিজের ও মায়ের নামে থাকা জমি, শ্যালকের নামে থাকা দোতলা বাড়ি এবং নগদ মিলিয়ে দু’কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা সমবায়ে ফেরত দেয়। বাকি সাত কোটি ৪৪ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা ফেরানো নিয়ে নিশ্চুপ। সমবায় সমিতির পরিচালন কমিটি বাকি টাকা উদ্ধারের জন্য লাগাতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়ায় থানায় এফআইআর করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৮ সাল থেকে খারুই-গঠরা সমবায় সমিতির বোর্ড ছিল না। দু’টি টার্মে দু’জন কো-অপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট অফিসার ‘স্পেশাল অফিসার’ হিসেবে ওই সমিতির দায়িত্বে ছিলেন। সমিতির সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপক কর্মী হিসেবে অশোককুমার সামন্ত আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অপারেটার হিসেবে কাজ করত। ওই দায়িত্বে থাকাকালীন সে ব্যাপক দুর্নীতি করে বলে অভিযোগ। সমিতিতে আমানতকারীদের গচ্ছিত ফিক্সড ডিপোজিটের মতো হুবহু নকল সার্টিফিকেট বানানো হয়। নকলগুলি সমবায় অফিসে রেখে, আসল সার্টিফিকেটগুলি মেচেদার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে জমা করে কয়েক কোটি টাকা তোলা হয়। মেচেদার ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কটির কর্মীদের ভূমিকাও তদন্ত সাপেক্ষ। তমলুক-ঘাটাল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের একটি ইন্সপেকশন টিম ওই সমবায় সমিতির কারচুপির ধরন দেখে চমকে যায়। স্পেশাল অডিটে জানা যায়, কারচুপির পরিমাণ ১০ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা। জানা গিয়েছে, টার্ম ডিপোজিটে জমা তিন কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা, সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা ৭৭ লক্ষ টাকা, কারেন্ট অ্যাকাউন্টে জমা আড়াই লক্ষ টাকা, ফিক্সড ডিপোজিট থেকে লোন বাবদ চার কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা, বিভিন্ন টার্ম ডিপোজিটে সুদ বাবদ জমা ৪৬ লক্ষ টাকা এবং তমলুক-ঘাটাল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের শাখা থেকে চার লক্ষ টাকা তছরুপের ঘটনা ঘটেছে। চার বছরের বেশি সময় বোর্ড ছিল না। তারপর ২০২৩ সালের ১৯ এপ্রিল ওই সমবায়ে বোর্ড গঠন হয়েছে। বোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার পরই অভিযুক্তের কাছ থেকে টাকা ফেরানোর মরিয়া চেষ্টা চালায়। অভিযুক্ত ম্যানেজার নিজের নামে থাকা ১৫ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি জমির দলিল সমবায়কে হস্তান্তর করে। অভিযুক্তের মায়ের নামে ১২ লক্ষ টাকা মূল্যের আট ডেসিমল জমিও সমবায়ের নামে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও, অভিযুক্তের শ্যালকের নামে আট ডেসিমল জমির উপর থাকা একটি দোতলা বাড়ি সমবায়ের নামে হস্তান্তর হয়েছে। ওই বাড়ির দাম দেখানো হয়েছে, এক কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও, কয়েক দফায় নগদ টাকাও দিয়েছে অভিযুক্ত।