শহিদবেদীকে স্যালুট করেন কালনার বাসিন্দারা, বীর সেনাদের গল্প শুনে উদ্বুদ্ধ হয় নতুন প্রজন্ম
বর্তমান | ১১ মে ২০২৫
সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: কার্গিল থেকে কালনা শহরের দূরত্ব প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার। কাশ্মীরের পাহাড়ী এই এলাকার সঙ্গে পূর্ব বর্ধমানের এই এলাকার কোনও মিল থাকার কথা নয়। তবুও এই গ্রামের সঙ্গে কার্গিলের যেন এক আত্মিক যোগ গড়ে উঠেছে। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের সেনা দেশের মাটি দখলের দুঃসাহস দেখিয়ে ছিল। তবে, ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাতে সেইসময় পাকিস্তান পালানোর পথ পায়নি। দেশের মাটি রক্ষা করতে জীবন দিয়েছিলেন দেশের বীর সেনারা। কালনার কোয়ালডাঙা গ্রামে এলে মনে পড়বে সেই বীর সেনাদের অত্মত্যাগের কথা। কার্গিলে দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া সেনাদের স্মৃতিতে তৈরি হয়েছে শহিদবেদী। সেখানেই উড়ছে জাতীয় পতকা।
গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, এটা শুধু শহিদবেদী নয়, মন্দির। যুবকরা স্যালুট করেন। প্রবীণরা এই জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময় কপালে হাত ঠেকান। সম্মান জানান সেনা নায়কদের। আর বাসিন্দাদের দেশাত্মবোধক পাঠ দেন গ্রামের গর্ব প্রাক্তন সাব মেজর নরেশচন্দ্র দাস। কার্গিল যুদ্ধে তিনি নিজে লড়াই করেছিলেন। চোখের সামনে নিজের সহকর্মীদের বলিদান দেখছেন। তিনি বলেন, দেশের জন্য প্রাণ দিতে ভারতীয় সেনারা ভাবে না। কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তান পরাজিত হয়েছিল। ভারত সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে, মানবিকতার পক্ষে লড়াই করে। কার্গিলে ওরা আমাদের দেশের মাটি দখল করেছিল। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে লড়াই করতে হয়েছিল। সেই সব দিনগুলির কথা যুবকদের শুনিয়ে উদ্ধুব্ধ করি।
তিনি বলেন, শুধু কার্গিল নয়, ১৯৮৪ সালে অপারেশন ব্লুস্টার অভিযানেও শামিল হয়েছিলাম। সেসব দিনগুলির কথা এখনও চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কার্গিলের যুদ্ধ সব থেকে বেশি দিন স্থায়ী হয়েছিল। প্রতিকূল পরিস্থিতি থাকার পরও ভারতীয় সেনাবাহিনী এক কদমও পিছু হটেনি। দেশের সেই সেনাদের মনের মণি কোঠায় রাখার জন্যই শহিদবেদী তৈরি করা হয়। নতুন প্রজন্ম ইতিহাসকে চাক্ষূষ করতে পারবে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, কার্গিল যুদ্ধের কথা ভোলা যাবে না। সেই দিনগুলিতে গ্রামের ছেলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়েছিলেন। গর্বে আমাদের বুক ফুলে উঠেছিল। ঘরের ছেলে যাতে সুস্থভাবে বাড়ি ফিরতে পারে তারজন্য প্রার্থনা করেছিলে এলাকার সকলেই। যুদ্ধ শেষে জয়ের হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন নরেশবাবু। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দেশের জন্য লড়াই করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করা সহকর্মীদের সম্মান জানাতে তৈরি করবেন শহিদবেদী। সিদ্ধান্ত মতোই কাজ শুরু হয়। গ্রামে মাথা তোলে চারটি স্তম্ভ। মাঝখানে বসানো হয় জাতীয় পতাকা। ভারত যখন পাকিস্তানের প্রত্যাঘাত হানছে তখন যেন এই পতাকা উড়ে চলছে। গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, এটা যুদ্ধ জয়ের নিশান।