ব্যাঙ্ককর্মীর কাজে সন্তুষ্ট? কিউআর কোডে এবার মূল্যায়ন করতে পারবেন গ্রাহকরাই
বর্তমান | ১১ মে ২০২৫
বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: নিয়মিত ব্যাঙ্কে যেতে হয়? সেখানে ব্যাঙ্ককর্মীর ব্যবহারে আপনি বিরক্ত? নাকি কাজের যথেষ্ট চাপের মধ্যেও কাউন্টারে থাকা কর্মী ধৈর্য ধরে আপনার কথা শোনেন? আপনি যেমনই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন না কেন, এবার তা সরাসরি জানাতে পারবেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে। ব্যাঙ্কে প্রত্যেক কর্মীর সামনে থাকবে কিউআর কোড। সেই কোড স্ক্যান করে যে কোনও গ্রাহক ব্যাঙ্ককর্মীর পরিষেবা নিয়ে মতামত দিতে পারবেন। সেই মতামতের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ককর্মীর কাজের মূল্যায়ন হবে। আপাতত দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায় এই প্রকল্প চালু হয়েছে। আগামী দিনে সবক’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেই এই নিয়ম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্তে আদৌ খুশি নন কর্মচারীরা। তাঁদের মতে, এটি গ্রাহকদের খুশি করার একটা পন্থা হতেই পারে। কিন্তু যেভাবে পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ না করে কর্মীদের উপর পাহাড়প্রমাণ কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে এমনিতেই তাঁদের জন্য পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন। চাইলেও সুষ্ঠুভাবে পরিষেবা দিতে পারেন না অনেকে। সেখানে এই ধরনের নিয়ম কতটা বাস্তবসম্মত ও যুক্তিগ্রাহ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই।
কীভাবে মূল্যায়ন হবে কর্মীদের? জানা গিয়েছে, এক থেকে পাঁচের মধ্যে ‘রেটিং’ দেওয়ার সুযোগ পাবেন গ্রাহক। দেওয়া যাবে মতামতও। অফিসারদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। গ্রাহক তো বটেই, সম্ভাব্য গ্রাহকও ওই মূল্যায়নে অংশ নিতে পারবেন। নির্দিষ্ট সময় অন্তর মূল্যায়নের পর্যালোচনা হবে। যে কর্মীর ‘রেটিং’ ভালো হবে, তাঁকে পুরস্কৃত করা হতে পারে। ‘রেটিং’ খারাপ হলে পদোন্নতি বা অন্যান্য ক্ষেত্রে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকছে। কোনও ক্ষেত্রে যদি দেখা যায়, গ্রাহক ধারাবাহিকভাবে পরিষেবার ঘাটতির কথা জানাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে ত্রুটি চিহ্নিত করে তা বিশ্লেষণ করা হবে এবং সেই মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
কর্মীরা অবশ্য মনে করছেন, এই নিয়মে কাজের কাজ কিছুই হবে না। ব্যাঙ্ককর্মীদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি রাজেন নাগর বলেন, ‘এমনিতেই ব্রাঞ্চগুলিতে পর্যাপ্ত সংখ্যায় কর্মী নেই। অথচ গ্রাহক সংখ্যা ও পরিষেবার বহর দিন দিন বেড়েই চলেছে। কর্মীরা অত্যন্ত চাপের মধ্যে কাজ করেন। গ্রাহককে সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়ার জন্য যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, বহু ক্ষেত্রে তাও নেই। কোথাও প্রিন্টিং মেশিন খারাপ। কোথাও হয়তো কালি নেই। কোর ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দেওয়ার জন্য সুষ্ঠু ইন্টারনেট লিঙ্কও মেলে না অনেক সময়। গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে গেলে তাঁদের অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যাঙ্ককর্মীর তো কিছু করার নেই। অথচ গ্রাহকরা এই খামতিগুলির জন্য কর্মীকে দায়ী করে সেই মতো মূল্যায়ন করতে পারেন। তাই এই মূল্যায়ন পদ্ধতি আদৌ বিজ্ঞানসম্মত কি না, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।’