প্রীতেশ বসু, কলকাতা: রাজারহাট-নিউটাউনে নিজের বিলাসবহুল ভিলা। চোখে এই স্বপ্ন নিয়েই নির্মীয়মাণ সংস্থার কাছে বুকিংয়ের টাকা জমা দিয়েছিলেনকলকাতার এক বাসিন্দা। কিন্তু দীর্ঘদিন কেটে গেলেও নিজের বাড়ি অধরাই থেকে যায় তাঁর কাছে। জুতোর সুকতলা ক্ষয়ে গেলেও কবে বাড়ি পাবেন, তার কোনও উত্তর পাননি সেই ক্রেতা। শেষমেশ জানতে পারেন প্রকল্পটিই ব্যর্থ হয়েছে। স্থগিত হয়ে গিয়েছে নির্মাণ কাজ। মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে ক্রেতার। সুবিচারের আশায় তিনি দ্বারস্থ হন পশ্চিমবঙ্গ রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটির (রেরা)। শুনানি করে এই ক্রেতাকে সুদ সমেত অগ্রিম বা অ্যাডভান্সের টাকা ফেরত সুনিশ্চিত করেছে রেরা। তবে এই ক্ষেত্রে নজিরবিহীন বিষয় হল, সাধারণত স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার প্রাইম লেন্ডিং রেট অনুযায়ী টাকা ফেরত দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তা ছাড়াও অতিরিক্ত দুই শতাংশ হারে টাকা ফেরত সুনিশ্চিত করেছে রাজ্য।
সূত্রের খবর, শুধু শুনানি করে টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়াই নয়, সেই সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ ফেরত পাওয়াও সুনিশ্চিত করেছে রেরা। তিনটি কিস্তিতে এই টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। জানা গিয়েছে, ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় এই সমস্যার। টাকা দিয়েও বাড়ি না পাওয়ার যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পান ক্রেতা।
জানা গিয়েছে, সারা জীবনের সঞ্চয়ের থেকে প্রায় দু’লক্ষ টাকা তিনি ফ্ল্যাট পাওয়ার অগ্রিম হিসেবে জমা দিয়েছিলেন। পরের পর্যায়ের টাকা দেওয়ার আগেই সন্দেহ হয় এই ব্যক্তির। ফলে টাকা দেওয়ার আগে যাচাই করতেই জানতে পারেন, এর নির্মাণ কাজ স্থগিত হয়েছে।
ক্রেতাদের অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। নিয়মে বদল এনে বেশি সংখ্যক নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাট বাড়িকে রেরা আইনের অধীনে নিয়ে আসা হয়েছে। কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে রেরা রেজিস্ট্রেশন না থাকলে পুরসভা ফ্ল্যাট বাড়ির কমপ্লিশন সার্টিফিকেট দিতে পারবে না, একেবারে মুখ্যসচিবের করা নির্দেশিকার উপর ভিত্তি করে চালু করা হয়েছে এই নিয়ম। প্রতি তিন মাস অন্তর রেরা নথিভুক্ত নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাট বাড়ির অগ্রগতির হিসাব নির্দিষ্ট পোর্টালে না তুললে মোটা জরিমানার নিয়মও কড়া হাতে বলবৎ করছে রেরা কর্তৃপক্ষ। সেই কারণে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে জরিমানার মুখে পড়েছে ৫৮২টি নির্মীয়মাণ আবাসনের দায়িত্বে থাকা সংস্থা।