শ্যামগোপাল রায়
পশ্চিমবঙ্গে ২০২৩ সালে ১৪১২ জন চালক মারা গিয়েছেন পথ দুর্ঘটনায়। এঁদের অর্ধেকেরই বয়স ১৮ বছরের নীচে। গাড়ি চালানোর জন্য যে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন, সেটাও তাদের ছিল না বলে তথ্য উঠে এসেছে পরিবহণ দপ্তরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে। সরকারি সূত্রে খবর, ২০২৩ সালে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে আঠারো বছরের কম বয়সের ৭০৬ জন চালকের। এর মধ্যে রয়েছে ৩৯ জন নাবালিকাও।
এই ঘটনায় যেমন প্রশ্ন উঠছে চালকদের সচেতনতা নিয়ে, তেমনই প্রশাসনের নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর বক্তব্য, 'বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়ার পাশাপাশি পুলিশ এবং আমাদের অফিসারদেরও নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তবে যাঁরা গাড়ি চালাচ্ছেন, তাঁদেরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।'
পথ দুর্ঘটনায় রাশ টানতে স্পিড ম্যানেজমেন্ট পলিসি এনেছে রাজ্য। ওই পলিসি চালুর আগে দুর্ঘটনার বিষয়ে বিশদে জানতে পুলিশ, পরিবহণ দপ্তর, খড়গপুর আইআইটিকে দিয়ে একটি সমীক্ষা করানো হয়। ওই সমীক্ষায় জানানো হয়েছে, আঠারোয় পা দেওয়ার আগেই গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসে পড়ছে অনেকে। ক্রমশ এই প্রবণতা বাড়ছে। অথচ সেটা সম্পূর্ণ আইনবিরুদ্ধ।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় মারা গিয়েছেন লরি এবং ছোট মালবাহী গাড়ির চালকরা (১০০১ জন)। এদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ চালকের বয়সই আঠারোর নীচে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ওইসব গাড়িতে যারা খালাসির কাজ করে, তাদের বয়স ১৩-১৬ মধ্যে। চালকের সঙ্গে থাকতে থাকতে লাইসেন্স পাওয়ার আগেই ওই খালাসিরা যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়া স্টিয়ারিংয়ে বসে পড়ে। পণ্য পরিবহণে ব্যবহার হওয়া এই গাড়ির চালকদের দুর্ঘটনার বড় কারণ হিসেবে ক্লান্তিকে দায়ী করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে গাড়িগুলি ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়া।
একই সময়কালে মোটরবাইক চালাতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৩২ জন চালকের। এর মধ্যে ৫২ শতাংশ চালকের বয়স ১৮ নীচে। ওই বাইকারদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না-থাকা, হেলমেট ব্যবহার না-করা, আইন ভেঙে ড্রাইভিংকে দায়ী করা হয়েছে। খড়গপুর আইআইটি-র অধ্যাপক তথা পরিবহণ বিশেষজ্ঞ ভার্গব মৈত্র বলছেন, 'তরুণ প্রজন্মকে নিয়মে বাঁধতে গেলে প্রচার যেমন বাড়াতে হবে, তেমনই নজরদারিও বাড়ানো দরকার। সেটা না-হলে পথ দুর্ঘটনায় রাশ টানা সম্ভব নয়।' গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দিকটাও সরকারকে দেখতে হবে, মনে করেন ভার্গব।