অশীন বিশ্বাস, ব্যারাকপুর
যত দিন যাচ্ছে ডিজিটাল নির্ভরতা বাড়ছে সাধারণ মানুষের। মুঠো ফোনের দৌলতে নিমেষে সমস্ত মুশকিল আসান হয়ে যাচ্ছে। বার্থ ও ডেথ সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে আধার কার্ড সংশোধন, স্কুলের অ্যাডমিশন, চাকরির পরীক্ষায় বসার আবেদন, সবই এখন ঘরে বসেই করা যাচ্ছে।
এ বার বাড়িতে বসেই থানায় ডায়ারি করতে পারবেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের বাসিন্দারা।ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে গত পয়লা মে থেকে চালু হয়েছে ই–জিডি সার্ভিস। তার ফলে কোনও কিছু খোয়া গেলে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে বাড়িতে বসেই নির্দিষ্ট থানায় জেনারেল ডায়ারি করা যাবে।
আপাতত মোট ৪০টি আইটেমের উপর জেনারেল ডায়ারি করা যাবে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের অধীনস্ত মোট ২৫টি থানা এলাকায় এই বিশেষ পরিষেবা চালু হয়েছে।
কোনও জিনিস খোয়া গেলে কিংবা পিকপকেট হলে অভিযোগ জানানোর জন্য সাধারণত মানুষকে থানায় গিয়ে হত্যে দিতে হয়। তা নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হন সাধারণ মানুষ। এই ইস্যুতে বহু বার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আদালত। ই–জিডি সার্ভিস চালু হলে সেই সমস্যা অনেকটাই মিটবে বলে আশা করছেন পুলিশ কর্তারা।
কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পরিষেবা পেতে গেলে প্রথমে ব্যারাকপুর পুলিশের যে নিজস্ব ওয়েবসাইট (barrackporepolice.wb.gov.in) রয়েছে, তাতে ক্লিক করে সিটিজেন সার্ভিস অপশনে গিয়ে নাম রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। সেখানে অভিযোগকারীর নাম, ঠিকানা, কোন জিনিস হারিয়েছে ইত্যাদি আনুষঙ্গিক তথ্য উল্লেখ করতে হবে।
এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই সঙ্গে সঙ্গে ওই ওয়েবসাইট পেজ থেকে একটি জিডি নম্বর পেয়ে যাবেন অভিযোগকারী। দরকার হলে তিনি তার প্রিন্টআউট কাছে রাখতে পারবেন। পরে সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে তার উপর স্ট্যাম্প মারিয়ে আনতে পারেন। তবে স্ট্যাম্প মারতেই হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধ্যকতা নেই। পরবর্তীতে জিডি নম্বর দিয়ে ওয়েবসাইটে ক্লিক করলেই অভিযোগের অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যাবে।
পুলিশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট এলাকার বাসিন্দারা। বিশেষ করে এতে প্রবীণ মানুষরা খুবই খুশি হয়েছেন। কারণ, বয়স্করা অনেক সময় থানায় সশরীরে যেতে পারেন না।
অনেকেই অভিযোগ করছেন, এটিএম কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোবাইল, ল্যাপটপ, জমির দলিল কিংবা জীবন বিমার কোনও কাগজ হারিয়ে গেলে থানা সহজে অভিযোগ নিতে চায় না। কোনও কোনও সময় জিডি করতে গেলে থানায় দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়। কখনও আবার পুলিশের প্রশ্নবানের মুখে পড়তে হয়। তাতে সামগ্রিক ভাবে পুলিশেরও বদনাম হয়। সেই হয়রানি বন্ধ করতে পুলিশ যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানাচ্ছেন সবাই।
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর বলেন, ‘সাধারণ নাগরিকদের কথা ভেবেই আমরা ই–জিডি সার্ভিস চালু করেছি, যাতে মানুষের অযথা সময় নষ্ট না হয়। নাগরিকদের কাছে আবেদন, নির্দিষ্ট করে দেওয়া ৪০টি আইটেমের মধ্যে থাকা কোনও কিছু হারিয়ে গেলে যে কেউ অনলাইনে অভিযোগ জানাতে পারবেন। থানা ধরে ধরে প্রতিদিন সেই সমস্ত অভিযোগ পর্যালোচ করা হবে।’