আমেরিকার দৌত্যে শনিবার ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ বিরতির ঘোষণা হয়েছে। তবে তার আগেই শান্তির দাবি করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করলে শুরু হয়েছে পাল্টা আক্রমণের পালা। এমন পোস্ট করায় সিপিএমের দিল্লি রাজ্য কমিটির সদস্য তথা ছাত্রনেত্রী ঐশী ঘোষ সম্পর্কে তৃণমূল কংগ্রেসের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ওয়েবকুপার সদস্য রাজদীপ মাইতির আক্রমণ এ বার শালীনতার মাত্রা ছাড়াল। এ দিকে, ‘সেকু-মাকু’ বলে ফের সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সংঘাত বা যুদ্ধ তীব্র হলে সাধারণ মানুষের সঙ্কটও তীব্র হয়, এই যুক্তিতে উত্তেজনা কমানোর পক্ষে সওয়াল করেছিলেন ঐশী। আর তার পরেই তাঁকে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে আক্রমণ করার অভিযোগ উঠেছে সিটি কলেজ অফ কমার্স অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অঙ্কের শিক্ষক রাজদীপের বিরুদ্ধে। বিষয়টি সামনে আসার পরে তাঁর প্রোফাইল নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে এবং তাঁর নম্বরেও যোগাযোগ করা যায়নি।
সিপিএমের আর এক ছাত্রনেত্রী দীপ্সিতা ধরের একই ধরনের পোস্ট ঘিরেও আক্রমণ করা হয়েছিল। আক্রমণকারীদের মধ্যে বিজেপির লোকজনের পাশাপাশি তৃণমূলের কয়েক জন নেতাও রয়েছেন।
ঐশী সম্পর্কে ওই মন্তব্যের পরেই সরব হয়েছে ওয়েবকুটা। সংগঠনের সভাপতি শুভোদয় দাশগুপ্তের বক্তব্য, “অত্যন্ত নিন্দনীয়। এঁদের ঠিকানা জেল হওয়া উচিত। অথচ এখনও দিব্যি চাকরি করছেন, তা-ও আবার শিক্ষকতা।” তবে রাজদীপ যে সংগঠনের সদস্য, সেই ওয়েবকুপাও তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। সংগঠনের সহ-সভাপতি সেলিম বক্স মণ্ডলের বক্তব্য, “অত্যন্ত আপত্তিকর কাজ। আমাদের সংগঠন এমন কাজকে অনুমোদন করে না।” রাজদীপের কলেজের টিচার ইনচার্জ শিবানী বাগচী অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি কিছু জানেন না। কলেজের এক কর্মী মারা গিয়েছেন, তা নিয়ে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন।
এক সন্ন্যাসীর মন্তব্যকে হাতিয়ার করে ‘সেকু-মাকুদের’ তীব্র আক্রমণ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুও। ‘সেকু-মাকু’, ‘স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবী’, ‘রাষ্ট্রবিরোধী বাচাল’, এমন অভিধায় আক্রমণ করে শুভেন্দুর সংযোজন, “এই ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই’ ব্রিগেড ভুলে গিয়েছে ভারত কারও উপরে প্রথমে আঘাত হানে না। কিন্তু প্রতিরক্ষার অধিকার আমাদের রয়েছে।” তিনি আরও বলেছেন, “তাত্ত্বিক আঁতেল কুল সর্বদা আমাদের আত্মরক্ষার অধিকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। এঁদের মুখ থেকে কখনও পাকিস্তান, বাংলাদেশ, চিন, মৌলবাদী, মাওবাদী, নকশালদের বিরুদ্ধে কড়া শব্দ বেরোয় না।”
বিষয়টি নিয়ে পাল্টা সরব হয়েছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, “পহেলগামের ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তি চেয়ে দেশ ঐক্যবদ্ধ। দেশের বিদেশসচিব, সামরিক কর্তারা যুদ্ধ-জিগির তোলেননি। তাঁরা পরিমিত আঘাত, উত্তেজনা কমানোর কথা বলেছিলেন। তাঁরাও কি সেকু-মাকু? যাঁরা দীপ্সিতা, ঐশীদের কুৎসিত আক্রমণ করছেন, তাঁরা জানেন কি, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে পড়া ছাত্রছাত্রীদের পাশে ওঁরাই রয়েছেন?” এ দিকে, সংঘর্ষ বিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “সদর্থক পদক্ষেপ, আমরা সমর্থন করছি। দু’দেশের আলোচনা চলুক। সন্ত্রাসবাদের ভিত্তি নির্মূল করতে পাকিস্তানকে চাপ দিতে হবে। ট্রাম্প বুঝিয়ে দিলেন দু’দেশকেই কে পরিচালনা করছে।”