বিমানবন্দরে সতর্কতা বাড়ল কলকাতাতেও, বাতিল বহু উড়ান
আনন্দবাজার | ১১ মে ২০২৫
ভারত-পাক সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের আবহে বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরের পাশাপাশি নিরাপত্তা বাড়ানো হল কলকাতার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও। বিশেষ সতর্কতা বজায় রাখার ওই নির্দেশের প্রেক্ষিতে কলকাতা বিমানবন্দরের প্রবেশপথে গাড়ি দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণেই অ্যারাইভাল এবং ডিপারচার পথে ওই সতর্কতা মেনে চলা হচ্ছে বলে বিমানবন্দর সূত্রের খবর। এই আবহে কলকাতা বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় শিল্প সুরক্ষা বল বা সি আই এস এফ কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে খবর। যে সব কর্মীরা আগেই ছুটি নিয়েছিলেন, তাঁদের ছুটি বাতিল করে কাজে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রচলিত সুরক্ষা সংক্রান্ত কড়াকড়ি ছাড়াও উড়ানে ওঠার ঠিক আগের মুহূর্তে যাত্রীদের আর এক দফা পরীক্ষা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। উড়ান সংস্থাগুলি যাত্রীদের অন্তত তিন ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছনোর কথা বলেছে। পাশাপাশি, যাত্রীদেরও উড়ান সংস্থার পক্ষ থেকে দেওয়া সফর সংক্রান্ত নির্দেশিকা কঠোর ভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে।
বর্তমানে প্রায় সব আন্তর্জাতিক উড়ান পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে পশ্চিম এশিয়া বা ইউরোপে যাতায়াত করছে। এর পাশাপাশি, উত্তর ও পশ্চিম ভারতের আকাশসীমাতেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ বিমান কলকাতা থেকে পথ পরিবর্তন করে নাগপুর, মুম্বই হয়ে আরব সাগরের উপর দিয়ে পশ্চিম এশিয়া বা ইউরোপের দিকে যাচ্ছে। এর জেরে বিমানের বিপুল জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়াও কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের উপরে কাজের চাপ বহুলাংশে বেড়ে গিয়েছে। পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা আন্তর্জাতিক উড়ানগুলিও কলকাতা-নাগপুর হয়ে যাতায়াত করছে। কলকাতা বিমানবন্দর থেকেও একাধিক বিমান ঘুরপথে যাতায়াত করছে। উড়ান সংস্থাগুলি রুট বদল করেছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে। ঘুরপথে যাতায়াতের জন্য উড়ানে সময়ও বেশি লাগছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় এয়ার ইন্ডিয়া বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের কাছে তাদের পাইলট এবং বিমানকর্মীদের কাজের সময় পুনর্বিন্যাসের অনুমতি নিয়েছে।
নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশের পাশাপাশি ১৫ মে পর্যন্ত উত্তর, পশ্চিম এবং মধ্য ভারতের একাংশের মোট ২৭টি বিমানবন্দর বন্ধ রাখার নির্দেশও জারি করা হয়েছে। উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের আকাশসীমায় সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে অসামরিক বিমানের ওড়া। ওই সব বিমানবন্দরে উড়ান চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে দৈনিক গড়ে ৪০০টির বেশি উড়ান বাতিল হচ্ছে। কলকাতার ক্ষেত্রে দিনে ১০-১২টি উড়ান বাতিল হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
কেন্দ্রের বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের নির্দেশের প্রেক্ষিতে দেশের ২০টির বেশি বিমানবন্দরে উড়ানের ক্ষেত্রে নোটাম বা নোটিশ টু এয়ার মেন জারি হয়েছে। ওই সব অংশে বিশেষ সতর্কতা বিধি মেনে উড়ান চলাচল করছে। নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে বিমান পরিবহণ মন্ত্রক নিয়মিত ভিত্তিতে দেশের বিমানবন্দরগুলির অধিকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সুরক্ষা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করছে। উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিমানবন্দরগুলি আগামী ১৫ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকলে উড়ান সংস্থাগুলির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েকশো কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা। মাস কয়েক আগে পর পর বিভিন্ন বিমানবন্দরে বোমাতঙ্কের ঘটনায় সংস্থাগুলি বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছিল।