বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল
ওরা কখনও মা–কে দিয়ে আসবে না বৃদ্ধাশ্রমে। আজ, রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃদিবস। মায়ের পা ধুইয়ে দিয়ে, মিষ্টিমুখ করিয়ে ওরা সেই শপথ নেবে।
এ ভাবেই এই বিশেষ দিন পালন করবে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়ারা। সালানপুর ব্লকের রূপনারায়ণপুর পিস ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজ়েশনের ৫২ পড়ুয়ার মা এবং পথচলতি, আমন্ত্রিত প্রায় ১০০ মায়ের উপস্থিতিতে পড়ুয়ারা অভিনব ভাবে পালন করবে মাতৃ দিবস। এই অনুষ্ঠানের রয়েছে বিশেষ এক থিম, ‘বৃদ্ধাশ্রম কোনও মায়ের ঠিকানা নয়।’
এই শিক্ষা সংগঠনের সভাপতি এবং সমাজকর্মী শুভদীপ সেন বলছিলেন, ‘২০১০ থেকে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার সঙ্গে সংস্কৃতির চর্চা দেওয়া। রাতে পড়ার শেষে খাবার দিয়ে গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত ভাবে আমরা এই দিনটি পালন করে আসছি।
ছাত্র-ছাত্রীদের গত কয়েক বছর ধরে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, মা-বাবা র স্থান কিন্তু বৃদ্ধাশ্রম নয়। ওরা তা বুঝেছে। এই সংস্থার ছাত্রছাত্রী ও সম্মানিত অভিভাবকদের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান অন্য মাত্রা পাবে। আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবসে সমাজের কাছে আমাদের বার্তা, কোনও মায়ের ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম হতে পারে না।’
সংগঠনের অফিসের সামনে একটি খোলা জায়গায় চেয়ারে বসে থাকবেন মায়েরা। প্রত্যেকটি চেয়ারের পাশে একটি করে জলের বোতল এবং সন্তানদের হাতে একটি করে রুমাল থাকবে। ওই বোতলের জল দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা মায়েদের পা ধুয়ে দেবে। তার পরে মুখে তুলে দেবে মিষ্টি। মায়েরাও সন্তানদের মুখে তুলে দেবেন মিষ্টি।ছেলেমেয়েরা একটি করে গোলাপ ফুলও উপহার দেবে মায়েদের।
সেখানেই শেষ নয়। প্রত্যেকটি ছেলেমেয়ের হাতে সফত পাঠ করার জন্য থাকবে একটি করে কাগজ। যেখানে লেখা রয়েছে, ‘মা, এ জীবনে মা তোমাকে কখনও বৃদ্ধাশ্রমে যেতে দেব না।’
একসঙ্গে সকলে এই শপথ বাক্য পাঠ করবে। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা পড়ুয়াদের কেউ ১৪ কিলোমিটার, কেউ বা আবার ১৭ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেল চালিয়ে আসবে। প্রত্যকদিন দূরদূরান্তের গ্রাম থেকে রূপনারায়ণপুরের এই পিস দপ্তরে স্কুল ছুটির পরেই পড়তে আসে এই সমস্ত ছাত্রছাত্রী।
সংস্কৃতি চর্চাতেও এই সংস্থার শিক্ষার্থীরা যে পিছিয়ে নেই, তার প্রমাণ মিলেছে শনিবার পশ্চিম বর্ধমান জেলায় সলিল চৌধুরী শতবার্ষিকী কমিটির উদ্যোগে জামুরিয়ায় হওয়া প্রতিযোগিতায়। এই জেলা থেকে এই সংস্থার শিক্ষার্থীরা নির্বাচিত হয়েছে মূল পর্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে, যা হবে কলকাতায়।