প্রদীপ চক্রবর্তী, চুঁচুড়া
মোটর সাইকেল বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারের পরিবহন আইন মেনে না–চলা ও নম্বরবিহীন মোটর সাইকেল বিক্রির অভিযোগ ওঠায়, সাব ডিলার ও রিসেলারদের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল রাজ্যের পরিবহন দপ্তর।
চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল রাজ্যের পরিবহন দপ্তরের নির্দেশিকায় সমস্যার মুখে পড়েন জেলার প্রায় ২০০–র বেশি মোটর সাইকেল বিক্রেতা (সাব ডিলার ও রিসেলার)। সরকারি নির্দেশের পরেই, জেলার বৈদ্যবাটি, শেওড়াফুলি, আরামবাগ ও সিঙ্গুরে মোটর সাইকেল বিক্রেতাদের (সাব ডিলার ও রিসেলার) শোরুমে অভিযান চালান পরিবহন দপ্তরের আধিকারিকেরা। ধরপাকড় ও মোটর সাইকেল বাজেয়াপ্ত করার ঘটনাও ঘটে বলে অভিযোগ।
সরকারি নিষেধাজ্ঞায় মোটর সাইকেল বিক্রির ক্ষেত্রে (সাব ডিলার ও রিসেলার) আইনি জটিলতা তৈরি হতেই সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা শোরুম বন্ধ করে দেন। রুজি–রোজগারে বাধা পড়বে আশঙ্কা তৈরি হতেই, রাজ্যের পরিবহন দপ্তরের মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন ওয়েস্ট বেঙ্গল টুহুইলার সাব ডিলার এবং রিসেলার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা।
সম্প্রতি কলকাতার পরিবহন দপ্তরে সংগঠনের সভাপতি অন্বয় চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পাঁচ জনের একটি প্রতিনিধিদল পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সেখানে মন্ত্রীর সামনে সংগঠনের নেতৃত্ব আবেদন করে, চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর ও আরামবাগ মিলিয়ে প্রায় ২০০–র উপরে সাব ডিলার ও রিসেলার আছেন, যাঁরা মোটর সাইকেল বিক্রি করে সংসার চালান।
এই ব্যবসা কেউ ২০ বছর, কেউ ১০ বছর ধরে করছেন। কিন্তু রাজ্যের পরিবহন দপ্তর নোটিস দিয়ে সাব ডিলার ও রিসেলারদের মোটর সাইকেল (টুহুইলার) বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এ ছাড়া গাড়ির শোরুমগুলিতে অভিযান করে গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সরকারি বিধিনিষেধের কারণে ব্যবসা লাটে উঠেছে। সেই কারণে, সাব ডিলার ও রিসেলাররা চাইছেন, সরকারি নিয়ম শিথিল করুক প্রশাসন, যাতে তাঁরা মোটর সাইকেল বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন।
মন্ত্রী সাব ডিলার ও রিসেলারের দাবিতে সহমত পোষণ করে দপ্তরের সচিবকে বলেন, আলোচনার মাধ্যমে একটা রফাসূত্র বের করতে। সেই সঙ্গে সাব ডিলার ও রিসেলারদের নম্বরবিহীন মোটর সাইকেল বিক্রি করতে নিষেধ করেন। মন্ত্রীর আবেদনে সাব ডিলার ও রিসেলার সংগঠনের নেতৃত্ব সন্মতি দিয়ে জানিয়েছে।
মোটর সাইকেলের সাব ডিলার কৌস্তুভ চৌধুরী বলেন, ‘আমার শেওড়াফুলিতে শোরুম আছে। মোটর সাইকেল বিক্রি করেই সংসার চালাই। কিন্তু পরিবহন দপ্তরের নতুন নিয়মে আমাদের রুজি–রুটি বন্ধ হতে বসেছিল। মন্ত্রীর কাছে এসে সমস্যার কথা জানিয়েছি। উনি আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের সমস্যা শুনেছেন। প্রাথমিক ভাবে মন্ত্রী আমাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা আশাবাদী।’
ওয়েস্ট বেঙ্গল টুহুইলার সাব ডিলার এবং রিসেলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অন্বয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের জেলায় ২০০ ও গোটা রাজ্যে প্রায় ১২ হাজারের বেশি সাব ডিলার ও রিসেলার আছেন, যাঁরা মোটর সাইকেল বিক্রি করেন। কিন্তু সম্প্রতি পরিবহন দপ্তর নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেয়, সাব ডিলার ও রিসেলাররা কোনও মোটর সাইকেল বিক্রি করতে পারবেন না। তাতেই সমস্যা তৈরি হয়।
আমরা মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছি, সরকারি নিয়ম মেনে, পরিবহন দপ্তরকে রাজস্ব দিয়েই সাব ডিলার ও রিসেলারেরা মোটর সাইকেল বিক্রি করবেন। মন্ত্রী আমাদের কাছে আবেদন করেন, নিরাপত্তার কারণে নম্বরপ্লেট–বিহীন ও রেজিস্ট্রেশন ছাড়া মোটর সাইকেল বিক্রি না করতে। আমরা সাংগঠনিক ভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সরকারি নিয়ম মেনে চলব।’