কৌতুকে নজরুল, নবরূপে কবিকে তুলে ধরতে উদ্যোগী কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
বর্তমান | ১২ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: টেনিদা, টিনটিন, বাঁটুল দ্য গ্রেটের পর বাংলার কৌতুক সাহিত্যে নতুন চরিত্র নজরুল। ‘বিদ্রোহী’ হয়ে ওঠার আগে কবির ছেলেবেলা কেটেছে আর পাঁচটি শিশুর মতোই। ছোট্ট নজরুলের কাণ্ড কারখানাও ছিল হাস্যরসে চোবানো। ঘাড় পর্যন্ত নেমে আসা কোঁকড়ানো ঝাঁকড়া চুল। বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলোয় মেতে থাকা। সারাক্ষণ দুষ্টুমি। সে এক অন্য নজরুল। তার পর বড় হয়ে ছোটদের জন্য লিখে ফেললেন কবিতা, গান, ছড়া। সেগুলি আজও বাঙালির শিশু সাহিত্যের সম্ভারে অনবদ্য সম্পদ। তাই নজরুলের ছেলেবেলা থেকে শুরু করে শিশুদের বিনোদনে তাঁর যাবতীয় সৃষ্টি নিয়ে একটি যাত্রাপথ তুলে ধরছে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ। পুরো পরিক্রমাটাই কৌতুকে ভরা। কবির বাল্যবন্ধু শৈল, ছিনুর সঙ্গে নানা হাসির কাণ্ডও ঠাঁই পাচ্ছে সেখানে। সবমিলিয়ে, নজরুলের এই শৈশব-কীর্তি বর্তমান সময়ের শিশুদের মনজয় করবে বলে আশাবাদী নজরুল গবেষকরা। ইতিমধ্যেই নজরুলের প্রথম গাড়ি চড়ার গল্পটি কৌতুকের আকারে তুলে ধরার কাজ সম্পন্ন। আসন্ন নজরুল জয়ন্তীতে তা প্রকাশ করতে উঠেপড়ে লেগেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই ভাবনা পড়ুয়াদের নিজস্ব। তাঁরাই প্রথম আমাদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন। আমরাও উৎসাহিত হয়ে তাঁদের পাশে থেকে সব রকমের সহযোগিতা করছি।’
নজরুলের শৈশব-কীর্তির পরিক্রমাটি এরকম—একবার রানিগঞ্জের রাস্তার পাশে গাছের তলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন স্কুলপড়ুয়া নজরুল ইসলাম ও শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়। তখনই মেম সাহেবকে নিয়ে এক ইংরেজ সাহেব গাড়ি থামায় তাঁদের কাছে। সাহেব দু’জনের কাছে কিছু একটা জানতে চেয়েছিলেন। প্রশ্ন করেন ইংরেজিতে। বুঝতে পারেনি দুই বন্ধু। হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকেন দু’জনে। গাড়ি থেকে নেমে মেম সাহেব ভাঙা বাংলায় বুঝিয়ে বলেন। তখন আর হাসি চেপে রাখতে পারেনি নজরুল-শৈলজা। কেননা, ওই ইংরেজ দম্পতি পথভ্রষ্ট! আসানসোল যেতে গিয়ে ভুল করে রানিগঞ্জ চলে এসেছেন। আসানসোলের রাস্তা দেখিয়ে দিতেই সাহেবের গাড়িতে চাপেন দুই বন্ধু। সেই ছিল নজরুলের প্রথম গাড়ি চড়ার অভিজ্ঞতা। দুই বন্ধুর সেই ঘটনা শৈলজানন্দ লিখে গিয়েছেন ‘কেউ ভোলেনা, কেউ ভোলে’ বইয়ে। সেই বইয়ের প্রতিটি পাতাকেই কৌতুকের চরিত্রে এঁকে জীবন্ত করে তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার পড়ুয়া। কথপোকথন সাজিয়েছেন সুমনা মাজি, অঙ্কিতা মোহান্তি। নজরুল থেকে শৈলজানন্দ, মেম সাহেব চিত্রায়ণ করেছেন সুমনকুমার মল্লিক। প্রযুক্তিগত সাহায্য করেছেন ত্রিদেব রুইদাস।
কিশোর বয়স থেকেই বিদ্রোহী কবির দেশাত্ববোধ জেগে ওঠে। খ্রিষ্টান কবরখানায় গিয়ে বন্ধু শৈলকে নিয়ে বন্দুক থেকে গুলি ছোড়ার কাহিনিটিও অত্যন্ত আকর্ষণীয়। তাও পরবর্তী অধ্যায়ে কমিক্সের রূপ পেতে চলেছে। কবি গোলাম মোস্তাফা প্রথমবার নজরুলের বাড়ি যাওয়ার অভিজ্ঞতা লেখা হয়েছে এভাবে—‘ভায়া লাফ দেয় তিন হাত, হেসে গান গায় দিন রাত। প্রাণে ফূর্তির ঢেউ বয়, ধরার পর তার কেউ নয়।’ তেমনি কবিকে নিয়ে বিশিষ্ট জনের লেখাও গ্রাফিক্সের মাধ্যমে তুলে ধরে নতুন প্রজন্মের কাছে কবির মাহাত্ম্যকে এক অনন্য ভূমিকায় তুলে ধরতে উদ্যোগী হয়েছে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চন্দন কোনার বলেন, ‘খুকু -কাঠবেড়ালি কবিতা তো আমরা সবাই পড়েছি। কমিক্সের মাধ্যমে সেই কবিতা এখন আরও জীবন্ত হয়ে উঠবে। যা নতুন প্রজন্মের কাছে আর্কষণ বাড়াবে।’