• বাংলার পর্যটন মানচিত্রে ঠাঁই চৈতন্যের স্মৃতিধন্য কুলীনগ্রাম
    বর্তমান | ১২ মে ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল, জামালপুর: বাংলার বিদ্রোহী পুরুষ, বৈষ্ণব ভক্তিবাদ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ চৈতন্যদেবের পদধূলি পড়েছিল জামালপুরের কুলীনগ্রামে। তারও অনেক আগে থেকেই সাত্ত্বত বৈষ্ণবধর্মের লালনভূমি বলে গোটা বাংলায় খ্যাতি অর্জন করেছিল প্রাচীন এই জনপদ। ‘শ্রীকৃষ্ণ বিজয়’ কাব্য এই গ্রামে বসেই রচনা করেছিলেন মালাধর বসু। তাঁরই নাতি রামানন্দ বসু ছিলেন মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের অন্যতম পার্ষদ। চৈতন্যমঙ্গল কাব্যে বলা হয়েছে, বসু পরিবারের আমন্ত্রণে কুলীনগ্রামে এসেছিলেন চৈতন্যদেব। ছিলেন টানা তিনদিন। বাংলার এমন এক গুরুত্বপূর্ণ বৈষ্ণবতীর্থকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে আসছিলেন গ্রামবাসীরা। সেই দাবি এবার বাস্তবায়িত হতে চলেছে। রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে ঠাঁই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।  

    প্রশাসনের এই উদ্যোগে খুশি কুলীনগ্রাম। জানা গিয়েছে, পরিকল্পনার রূপরেখার থাকছে, মালাধর বসু স্মৃতি মন্দির। সেটি নতুন করে গড়ে তোলা হবে। গ্রামে তৈরি হবে মিউজিয়াম। বিল্ডিংয়ে থাকবে প্রাচীন স্থাপত্য। গ্রামে রয়েছে একাধিক প্রাচীন মন্দির। সেই মন্দিরগুলিও সংস্কার করে সংরক্ষণ করা হবে। প্রায় এক কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা খরচ করে গোটা  প্রকল্পটি  বাস্তবায়িত করতে। জেলাশাসক আয়েশা রানি এ বলেন, ‘কুলীনগ্রাম ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। সেখানে একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলার আরও বেশ কিছু গ্রামে মহান ব্যক্তিরা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেই জায়গাগুলিও সাজিয়ে তেলা হবে।’

    কুলীনগ্রামে ঘুরলে দেখা যাবে বহু প্রাচীন নির্দশন। রয়েছে প্রাচীন রথ। গ্রামের মাঝখানে জগন্নাথদেবের মন্দির। রয়েছে বল্লাল সেনের আমলে গোপাল মন্দিরও। পালযুগের বহু মূর্তিও এই গ্রামের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। রথযাত্রার দিন গ্রামের ছবিটাই বদলে যায়। গ্রামের প্রাচীন গাছগুলিও যেন বহু ইতিহাসের সাক্ষী। প্রাচীন এই বৈষ্ণব পীঠে ঘুরতে আসেন বাইরের বহু পর্যটক। জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মেহেমুদ খান বলেন, ‘আমরা বহুদিন ধরে এই গ্রামকে পর্যটন মানচিত্রে ঠাঁই দেওয়ার চেষ্টা করেছি। জেলা প্রশাসন যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। চৈতন্যদেব এই গ্রামে থেকে গিয়েছেন। এটা আমাদের বড় প্রাপ্তি।’ স্থানীয়রা বলেন, কুলীনগ্রামে রথযাত্রার দিন বাইরে থেকে বহু মানুষ ভিড় করেন। গ্রামে মেলা বসে। রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘এই বৈষ্ণবতীর্থ স্থানের গুরুত্ব অন্য রকম। মালাধর বসুর নাতি ছিলেন রামানন্দ। তিনি মহাপ্রভুর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এই গ্রামকে হেরিটেজ হিসাবে ঘোষণা করার দাবি বহুদিন ধরেই করা হয়েছে।

    পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে রয়েছে চৈতন্যদেব মহাপ্রভুর স্মৃতি। সেসব ঠাঁই গুলি সংরক্ষিত রয়েছে। এখানে মিউজিয়াম বা স্মৃতিমন্দির তৈরি হলে পর্যটকদের কাছে গ্রাম আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। বৈষ্ণবতীর্থক্ষেত্রের আজানা ইতিহাস জেনেও তাঁরা সমৃদ্ধ হতে পারবেন।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)