নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: এ যেন নিধিরাম সর্দার! না আছে ঢাল, না আছে তলোয়ার! দপ্তর রয়েছে, অথচ গাড়ি বা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিছুই নেই। ফলে রাতবিরেতে কাজে নামতে হলে কর্মীদের আগে ছুটতে হয় গাড়ি ভাড়া করতে। হাওড়ার বনদপ্তরের এই হচ্ছে অবস্থা। বন্যপ্রাণ উদ্ধারের পর অগত্যা খাঁচায় ভরে বাইকে চাপিয়ে নিয়ে আসতে হয় বনকর্মীদের। উদ্ধারকারী ভ্যানের সংখ্যা না বাড়ালে কাজ চালানোই দায় হয়ে পড়ছে কর্মীদের। এমনটাই দাবি দপ্তরের।
হাওড়া বনবিভাগের অধীনে মোট চারটি রেঞ্জ রয়েছে। এগুলি হল, হাওড়া আরবান সোশ্যাল ফরেস্টিং রেঞ্জ, হাওড়া রুরাল সোশ্যাল ফরেস্টিং রেঞ্জ, হুগলি সোশ্যাল ফরেস্টিং রেঞ্জ এবং আরামবাগ রেঞ্জ। বনদপ্তর সূত্র জানা গিয়েছে, এই চারটি রেঞ্জ মিলিয়ে রেসকিউ ভ্যানের সংখ্যা মাত্র দু’টি। একটা সময় ছিল, যখন এই চারটি রেঞ্জের জন্য মাত্র একটি রেসকিউ ভ্যান ছিল। তা দিয়েই কাজ চালাতে হতো বনকর্মীদের। দীর্ঘ আবেদনের পর হুগলির সাংসদের তরফে একটি আধুনিক রেসকিউ ভ্যান পায় বনদপ্তর। জেলা বনদপ্তরের চারটি রেঞ্জের মধ্যে একমাত্র আরামবাগে সামান্য কিছু বনাঞ্চল থাকায় ভ্যানটিকে সেখানেই কাজে লাগানো হতো। কিন্তু হাওড়ার দু’টি রেঞ্জের জন্য কোনও ভ্যান ছিল না। আহত হনুমান, বনবিড়াল কিংবা ছোটখাটো বন্যপ্রাণ উদ্ধার করার পর তাদের সুরক্ষিতভাবে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হলে লরি কিংবা ম্যাটাডরই ভরসা ছিল কর্মীদের। তা না পেলে ছোট খাঁচায় আহত জীবকে ঢুকিয়ে বাইকে করে নিয়ে যেতে হয়। যা শুধুমাত্র দৃষ্টিকটূই নয়, বিপজ্জনকও বটে। এদিকে, দপ্তরের আধিকারিকদের জন্য গাড়ি বরাদ্দ রয়েছে মাত্র দু’টি। পুরনো আমলের লরঝরে সেই গাড়িতে চেপেই সরকারি মিটিং বা ঘটনাস্থলে যেতে হয় আধিকারিকদের।
শুধু গাড়ি নয়, জেলা বনদপ্তরের কাছে জীবজন্তু উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামেরও অভাব রয়েছে। হাওড়া বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই এই সমস্যা চলে আসছে। বিভিন্নভাবে গাড়ি জোগাড় করার চেষ্টা করছি। তিনটে গাড়ি অন্তত প্রয়োজন। আশা করছি সমস্যা মিটবে।’
জানা গিয়েছে, সিএসআর ফান্ডে রেসকিউ ভ্যান জোগাড় করার চেষ্টা করেছিল বনদপ্তর। গাড়ির ব্যবস্থা হলেও বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণের খরচ, ড্রাইভার ও তেলের জোগান কীভাবে হবে, সেই জট কাটাতে গিয়ে আর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। গাড়ির জন্য ইতিপূর্বেই জেলা পরিষদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনা সেরেছে বনদপ্তর। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেই সমস্যার সমাধান হয়নি। বনকর্মীদের অনেকের বক্তব্য, ‘প্রায়ই হাওড়ার গ্রামীণ এলাকা থেকে অসুস্থ বন্যপ্রাণ উদ্ধারের খবর আসে। গাড়ি ও সরঞ্জাম না থাকায় যেকারণে যথা সময়ে গিয়ে উদ্ধারকাজ করা যাচ্ছে না। ভীষণ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের।’