ঋণের চাপ, পাওনাদারের হুমকি, বাঁকড়ায় অনটনেই আত্মঘাতী ৩
বর্তমান | ১২ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: তিন মাস আগেই কাজ হারিয়েছিলেন শুভময়। বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধা মা ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন দিদির চিকিৎসার বিপুল খরচ। জমছিল ঋণের পাহাড়। নিত্যদিন বাড়ির সামনে পাওনাদারদের তাগাদা। পারিবারিক অশান্তির জেরে গত শুক্রবার রাতে চরম সিদ্ধান্ত নেয় ঘোড়ুই পরিবার। পরিকল্পিতভাবে রাতের খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তা খেয়ে নেয় তিনজনই। হাওড়ার বাঁকড়ায় বন্ধ ঘর থেকে একই পরিবারের তিনজনের মৃতদেহ মেলার পর এমনই তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিস।
শনিবার রাত ৮টা নাগাদ বাঁকড়ার দক্ষিণপল্লির বাড়ি থেকে শুভময় ঘোড়ুই (৪২), তাঁর মা শেফালি ঘোড়ুই (৬৫) ও দিদি সঙ্গীতা ঘোড়ুইয়ের (৪৫) মৃতদেহ উদ্ধার করে ডোমজুড় থানার পুলিস। দেনা সংক্রান্ত সমস্যার জেরেই পরিবারটি আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারে বলে প্রথম থেকে অনুমান করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিস। রবিবার সকালেই ঘটনাস্থলে যান ফরেন্সিক টিমের সদস্যরা। ঘর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা। পরিকল্পনা করেই তিনজন বিষ মেশানো খাবার খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে পুলিস। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, পিডব্লুডিতে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করতেন শুভময়। তাঁর উপার্জনের টাকাতেই বৃদ্ধা মা শেফালিদেবীর কিডনির চিকিৎসা চলত। সেইসঙ্গে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন দিদির চিকিৎসার যাবতীয় খরচও বহন করতে হতো শুভময়কে। তিনমাস আগে কাজ হারান তিনি। সংসার চালাতে গিয়ে প্রচুর টাকা ধার করে বসেন। সেই ধার পরিশোধ করতে না পারায় গত কয়েকদিন ধরেই পাওনাদাররা তাঁর বাড়িতে এসে তাগাদা দিচ্ছিলেন। এমনকী, দ্রুত টাকা মেটানোর জন্য পরিবারকে হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
হাওড়া সিটি পুলিসের এক কর্তা বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। নতুন করে টাকা ধার নিতে পারছিলেন না শুভময়। সংসার চালাবেন কী করে, বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তার জেরেই চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় পরিবারটি।’ পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় পরিবারকে নিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শুভময়। শুক্রবার রাতে খাবারে বিষ মিশিয়ে মা ও দিদিকে নিয়ে একসঙ্গে খেতে বসেন তিনি। বিষ মেশানো খাবার খেয়ে তিনজনই একটি খাটে পাশাপাশি শুয়ে পড়েন। গভীর রাতে মৃত্যু হয় তাঁদের। এদিকে, শনিবার সকাল থেকে বাড়ির বাইরে কাউকে বেরতে না দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। প্রতিবেশীরা বাড়ির সামনের জড়ো হয়ে তাঁদের ডাকাডাকিও করেন। এরপর সন্ধ্যায় খবর দেওয়া হয় থানায়।