নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এতদিন ধরে বাজার গরম রেখে দিয়েছে ‘মুঠোফোন’। এবার বাজার গরম করতে চলে এল ‘মুঠোফ্যান’।
এখন মুঠোফ্যানের বনবন আওয়াজে কলকাতার বাজার গরম থাকছে। তেমনই ঠান্ডা থাকছে পথচারী মানুষের দেহ-মন। ঘাম মুছতে আগে পকেট থেকে রুমাল বেরত। এখন ঘামের প্রশ্ন নেই। হাঁটতে হাঁটতে হাওয়া খেয়ে নিচ্ছে বাচ্চা-বুড়ো।
অনেকের বাড়িতে না হয় এসি আছে। অনেকের জন্য না হয় এসি গাড়ি বা বাস-মেট্রো আছে। কিন্তু অনেকের তো সেসব নেই। প্রখর রোদে তাঁদেরও পথ হাঁটতে হয়। প্রবল তাপে শরীর অস্বস্তি করে। ঘেমেনেয়ে একসা হতে হয়। তাদের জন্য এসেছে মুঠো-ফ্যান। নানা আকারের, নানা প্রকারের ফ্যানে শহরের বাজার ভরেছে।
বিক্রেতারা হাঁকছেন, ‘গরম বাজারের ঠান্ডা মেশিন। নিয়ে যান, নিয়ে যান। অনলাইনের চেয়ে কম দাম, নিয়ে যান, নিয়ে যান।’ এ মুঠোফ্যানের বাহারি সব নাম। কোনওটির নামই হল ‘মুঠোফ্যান’। কারও নাম ‘এসি-ফ্যান’। দেড়শ টাকা থেকে দাম শুরু। বড় ফ্যানও আছে, দাম মোটামুটি ৭০০ টাকা। অনেকে প্রিয়জনকে উপহার দেবেন বলে কিনছেন। অনেকে নিজের জন্য। সবমিলিয়ে নিজেকে ঠান্ডা রাখতে কেনার ধুম। আর বাজার গরম মুঠোফ্যানের। কলকাতায় চাঁদনি চক মার্কেটে গেলেই মিলছে।
সিলিং ফ্যানের মতো রেগুলেটরের সিস্টেমও আছে। গতি বাড়ানো-কমানো যায়। আনোয়ার নামে এক বিক্রেতা জানালেন, ‘ফোনের চার্জার দিয়েই চার্জ হবে। ফুল চার্জে চলবে পাঁচ ঘণ্টা।’ বড় আকারের এসি-ফ্যানের আবার কায়দা আছে। ফ্যানের মাথায় রয়েছে জল ভরার জায়গা। জল ভরলে কাজ করবে কুলারের মতো। এগুলি অবশ্য ব্যাটারি নয় কারেন্টে চলে। চাহিদা অতটা নেই। কিন্তু ছোট ফ্যানগুলোর বিক্রি দেদার। ‘আমাদের এখানে অনলাইনের চেয়ে অনেকটাই কম দাম। বড় ফ্যানগুলো অনলাইনে হাজার টাকা দাম। আমাদের এখানে ৬০০ টাকা’-বললেন এক দোকানদার। ক্রেতাদের প্রশ্ন, ‘কতদিন চলবে ভাই? বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরই খারাপ হয়ে যাবে না তো?’ বিক্রেতার যুক্তি, ‘লাখ লাখ ফ্যান বিক্রি করছি স্যার। খারাপ হলে দোকান তো উঠে যেত।’
সোদপুরের কমলিকা দাস চাঁদনিতে এসেছেন মুঠোফ্যানই কিনতে। বলেন, ‘আমি ট্রেনে যাতায়াত করি। খুব ভিড় হয়। এমন একটা ছোট ফ্যান থাকলে একটু স্বস্তি। অনলাইনে দেখছিলাম। বাজারে এসে দরদাম করে দেখছি অনলাইনের চেয়ে অনেকটাই কম দাম।’ সাধন দাস এসেছিলেন চাঁদনিতে। তিনি বেশ রসিক। বলেন, ‘আর কয়েকবছর বাদে মুঠো-এসি’ পেয়ে যাবেন ম্যাডাম।’ কমলিকা হাসলেন। তারপর কিনলেন দু’খানা ফ্যান। নিজের আর সেলসম্যান স্বামীর জন্য। সাধনও কিনলেন স্ত্রীর জন্য। গিন্নির রান্নাঘরে খুব কষ্ট হয়। এই গরমে অঙ্গ শীতল করতে এসি, সিলিং ফ্যান, এয়ার কুলারের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে মুঠোফ্যান। এক হাতে আইসক্রিম অন্য হাতে ফ্যান, ধর্মতলা থেকে হাতিবাগান, গড়িয়াহাট থেকে গড়িয়া গেলে আকছারই চোখে পড়ছে। চাঁদনি চকে তোলা নিজস্ব চিত্র।