• জেলায় জেলায় তিন মাসের খাদ্যদ্রব্য মজুত রাখছে নবান্ন
    বর্তমান | ১২ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: আপাতত সংঘর্ষ বিরতি চলছে ভারত-পাকিস্তানের। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, বলা যায় না। এই আবহে একগুচ্ছ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে প্রশাসন। একদিকে যেমন আগামী তিন মাসের জন্য খাদ্যদ্রব্য মজুত রাখা হচ্ছে, পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলিতে রক্ত, ইনজেকশন, ওষুধ, চিকিৎসাজনিত সরঞ্জাম  প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। 

    রবিবার রাজ্য পুলিসের ডিজি রাজীব কুমার, সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির সচিব, প্রতিটি জেলার জেলাশাসক, পুলিস সুপার, পুলিস কমিশনারদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। আগামী তিন মাসের জন্য চাল সহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য প্রতিটি জেলায় মজুত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। ১৯ মে’র মধ্যে আগামী জুন মাসের বরাদ্দ খাদ্যশস্য (যা রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছয়) গুদামজাত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জুলাই মাসের বরাদ্দের জন্য মজুতের কাজ শেষ করতে হবে ২৬ মে’র মধ্যে। এই সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আগষ্ট মাসের বরাদ্দ মজুতের কাজ ৩১ মে’র মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে। দিল্লির তরফেও এনিয়ে রাজ্যের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে বলে খবর। পশ্চিমবঙ্গ সহ সব রাজ্যকেই চলতি মে মাসের মধ্যে পরবর্তী তিন মাসের (জুন-আগস্ট) খাদ্যশস্য একসঙ্গে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। শুধু তুলে নেওয়াই নয়, খাদ্যমন্ত্রক রাজ্যগুলিকে জানিয়েছে, সেগুলি গ্রাহকদের বিরতণও করে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় তিন মাসের জন্য পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্য খাদ্যশস্য একসঙ্গে নিয়ে নিতে বলা হয়েছে। একইভাবে জুন মাসের মধ্যে পরবর্তী তিন মাসের (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) মাসের খাদ্যশস্যও তুলে নিতে হবে। এই খাতে এক মাসে পশ্চিমবঙ্গের প্রয়োজন হয় ৩ লক্ষ ৩০ হাজার ৮৮৫ মেট্রিক টন চাল-গম। অর্থাৎ, এই অবস্থায় ৩০ মে’র মধ্যে ৯ লক্ষ ৯২ হাজার ৬৫৪ মেট্রিক টন চাল-গম তুলে নিতে হবে। একসঙ্গে এত পরিমাণ খাদ্যশস্য রাখার ক্ষেত্রে যে সমস্যা হবে, বলাই বাহুল্য। ততদিনে বর্ষাও এসে পড়বে। ফলে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য স্রেফ পড়ে পড়ে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন রেশন দোকানদাররা। তাই কেন্দ্রীয় খাদ্যসচিব সঞ্জীব চোপড়াকে চিঠি দিয়েছেন অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু। রেশন দোকানে একসঙ্গে তিন মাসের খাদ্যশস্য না দিয়ে তা কেন্দ্রীয় গুদামে রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। 

    এদিকে, নবান্ন সূত্রে খবর, সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ারদের বিশেষ (রিফ্রেসার ট্রেনিং)  দিতে জেলাওয়াড়ি তালিকা তৈরির কাজ শুরু হবে শীঘ্রই। সীমান্তবর্তী জেলাগুলিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যে সমস্ত সীমান্ত এলাকা ঘন জঙ্গল দিয়ে ঘেরা, সেখানে পুলিসকে আরও সক্রিয় হতে বলা হয়েছে। সুন্দরবন এবং উত্তরবঙ্গের এমন এলাকায় বিশেষ নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিনই মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, সরকারি হাসপাতালের সুপার, সিএমওএইচ, নার্সিং আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। আগামী দু’মাসের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ, ইনজেকশন, রক্ত মজুত রাখার কথা বলা হয়েছে সেখানে। এছাড়া,  চিকিৎসার সরঞ্জাম সব ঠিক আছে  কি না, খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে নিতে বলা হয়েছে। যত বেশি সংখ্যক অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা এবং চালক ও সহযোগীদের সিপিআর শেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়াও মেডিক্যাল অফিসার, নার্স, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের অ্যাডভান্স লাইফ সাপোর্ট ট্রেনিং গ্রহণ সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)