• সম্প্রীতি-পথে নামার ডাক বামের, আক্রমণে বিজেপি
    আনন্দবাজার | ১২ মে ২০২৫
  • সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতার পাশাপাশিই সম্প্রীতির ডাক দিয়ে এ বার পথে নামার সিদ্ধান্ত নিল বাম দলগুলি। যুদ্ধের নামে জিগির বন্ধ করার ডাক দেওয়ায় বামেদের প্রবল আক্রমণে নেমেছে বিজেপি শিবির। সঙ্গে যোগ দিচ্ছে আরও কিছু মহল। এই পরিস্থিতিতে রাস্তায় নেমেই নিজেদের কথা বলতে চাইছেন বাম নেতৃত্ব। কলকাতায় ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত কাল, মঙ্গলবার ওই সম্প্রীতি মিছিলে বামফ্রন্টের দলগুলির পাশাপাশি সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, এসইউসি-রও যোগ দেওয়ার কথা।

    আমেরিকার মধ্যস্থতায় আপাতত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ-বিরতি হয়েছে। তারই মধ্যে শনিবারই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ-বিরতি ভেঙে ফের হামলার অভিযোগ এসেছে, যার সমুচিত জবাব দেওয়ার কথা বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই পরিস্থিতিতে শান্তির কথা বললে ‘ভুল বার্তা’ যেতে পারে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বাম শিবিরের একাংশের মধ্যেও। বিশেষত, সমাজমাধ্যমে যুদ্ধ-উন্মাদনা যে আকার নিয়েছে, তার প্রেক্ষিতে এই সংশয় আরও বেড়েছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী অবশ্য বলছেন, ‘‘বহিঃশত্রুর আক্রমণের বিরুদ্ধে দেশ সব সময়েই ঐক্যবদ্ধ। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হোক এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে দেশে বিভাজনের চেষ্টা বন্ধ হোক, এই দুই বার্তাই আমরা দিতে চাই।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরা অবশ্য অভিযোগ করছেন, বামেরা শান্তির কথা বলে কিন্তু বাংলাদেশ, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া শব্দ তাদের মুখ থেকে বেরোয় না!

    পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ায় রবিবার সিটুর জেলা সম্মেলনের সমাবেশে সিপিএমের মহম্মদ সেলিম স্মরণ করেছেন প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কথা। তিনি বলেছেন, ‘‘শিমলা চুক্তি অনুযায়ী, কাশ্মীর দু’দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। তৃতীয় পক্ষ হস্তক্ষেপ করবে না। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প কেন করলেন? সব কা মালিক এক হ্যায়— ট্রাম্প!’’ সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু বলেছেন, ‘‘আগামী ২০ মে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ায় দেশব্যাপী ধর্মঘট ডাকা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সেই ধর্মঘট হবে কি না, তা নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক হবে ১৫ তারিখ।’’

    বিজেপি-সহ নানা মহলের আক্রমণের মুখে বামেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সেলিমের বক্তব্য, ‘‘আমরা চাই, ভারত এবং পাকিস্তানের মানুষ দীর্ঘস্থায়ী শান্তিতে থাকুন। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ শান্তি চান। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের ভিত্তি নষ্ট করতে হবে। আমাদের এই সুযোগ আছে, আমরা শর্ত দিতে পারি যাতে পাকিস্তানের মাটি থেকে সন্ত্রাসবাদে মদত বন্ধ করা যায়। আলোচনা প্রক্রিয়ায় এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের আরও মন্তব্য, ‘‘সমস্যার সমাধান ‘গোলি সে নেহি, বোলি সে হোগা’ (গুলি দিয়ে নয়, কথা দিয়ে), এ কথা আমরা বললে বলা হয় দেশদ্রোহী! তা হলে কি আমাদের বিদেশ সচিবকেও দেশদ্রোহী বলা হবে?’’

    দলের কৃষক সংগঠন অগ্রগামী কিসান সভার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলন উপলক্ষে এ দিনই বনগাঁয় ফরওয়ার্ড ব্লক মিছিল করেছে সেনাবাহিনীকে কুর্নিশ জানিয়ে। পথে বিএসএফের একটি ট্রাক এসে পড়লে জওয়ানদের কৃতজ্ঞতা জানান সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মিছিলে ছিলেন ফ ব-র জেলা সম্পাদক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, কিসান সভার নেতা গোবিন্দ রায় প্রমুখ। সংঘর্ষ-বিরতিতে দু’দেশের মানুষ স্বস্তি পেয়েছেন দাবি করে এসইউসি-র সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ বলেছেন, পহেলগামের ঘটনায় হত্যাকারীরা এখনও ধরা পড়েনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পূর্বেকার সামরিক অভিযান সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বন্ধ করতে পারেনি। আমরা দুই দেশের জনসাধারণকে বলতে চাই, সন্ত্রাসবাদ এবং যুদ্ধ–ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আপনারা আন্দোলন গড়ে তুলুন।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)