স্যালাইন কাণ্ডের পর থেকে ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে, রবিবার রাতে কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যু হল নাসরিনের
আনন্দবাজার | ১২ মে ২০২৫
কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যু হল স্যালাইন কাণ্ডে চিকিৎসাধীন নাসরিন খাতুনের। হাসপাতাল সূত্রে খবর, কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছিল নাসরিনের। চলছিল ডায়ালিসিসও। রবিবার রাত ১১টা নাগাদ চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
চলতি বছরের শুরুতেই স্যালাইন কাণ্ডে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল রাজ্য জুড়ে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে রিঙ্গার্স ল্যাকটেট স্যালাইন দেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন পাঁচ প্রসূতি। তাঁদের মধ্যে এক জনের মৃত্যুর পরেই স্পেশ্যাল ‘লাইফ সাপোর্ট’ অ্যাম্বুল্যান্সে করে নাসরিন-সহ তিন প্রসূতিকে পাঠানো হয়েছিল কলকাতার এসএসকএম হাসপাতালে। তার মধ্যে দু’জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও নাসরিনের চিকিৎসা চলছিল। রবিবার রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, ‘‘অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। রবিবার রাতে ডায়ালিসিস নিতে নিতেই মাল্টিঅরগ্যান ফেলিয়োরের জেরে নাসরিন খাতুনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। সোমবার এসএসকেএমেই দেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। দেহ বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের তরফে গাড়ি পাঠানো হয়েছে।’’ অন্য দিকে, নাসরিনের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন দশেক আগেই জেনারেল বেডে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল তাঁকে। একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন তিনি। শনিবারই বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু শুক্রবার রাত থেকে ফের খিঁচুনি ও বমি শুরু হয়। রবিবার রাতে কিডনি-সহ একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যু হয় নাসরিনের। বাড়িতে তাঁর সদ্যোজাত সন্তান রয়েছে।
গত ৮ জানুয়ারি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে স্যালাইন দেওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন পাঁচ প্রসূতি— রেখা সাউ, মামণি রুইদাস, মাম্পি সিংহ, মিনারা বিবি ও নাসরিন খাতুন। পরে মামণির মৃত্যু হতেই শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য জুড়ে। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেডিক্যাল কলেজের আরএমও-সহ হাসপাতালের সুপার এবং এক জুনিয়র ডাক্তারকেও সাসপেন্ড করা হয়। ঘটনায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকার। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে নাসরিন, মাম্পি ও মিনারাকে এসএসকেএমে নিয়ে আসা হয়। তিন জনেরই শারীরিক অবস্থা এতটাই সঙ্কটজনক ছিল যে, পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন চিকিৎসকেরাও। তিন জনেরই কিডনি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। চলছিল ডায়ালিসিস। সঙ্গে রক্তে সংক্রমণের মাত্রাও ছিল খুব বেশি। তিন প্রসূতির চিকিৎসায় ১০টি বিভাগের ১৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়ে তৈরি হয়েছিল মেডিক্যাল বোর্ড। তবে টানা চিকিৎসায় একটু একটু করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছিলেন তাঁরা। ফেব্রুয়ারিতে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান মাম্পি ও মিনারা। তবে কিডনিতে সমস্যা থাকায় নাসরিন হাসপাতালে ছিলেন। সেখানেই রবিবার মৃত্যু হল তাঁর।