• কর্মী ছাঁটাই, মেট্রোর শিয়ালদহ থেকে এসপ্লানেড যাত্রী পরিষেবা চালু কবে?
    আনন্দবাজার | ১২ মে ২০২৫
  • প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ। বিভিন্ন দফতর থেকে অনুমতি নেওয়ার পর্বও মিটেছে। তার পরেও ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ থেকে এসপ্লানেড পথে যাত্রী পরিষেবা কবে শুরু হবে, তার স্পষ্ট উত্তর মিলছে না। মেট্রো কর্তৃপক্ষ দ্রুত পরিষেবা শুরু করার পক্ষপাতী হলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো লোকবল আছে কিনা, উঠছে সেই প্রশ্ন।

    উল্লেখ্য, শিয়ালদহ থেকে এসপ্লানেড পর্যন্ত ২.২ কিলোমিটার পথে পরিষেবা চালু হলে হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত পুরো পথ মেট্রোর মাধ্যমে জুড়ে যাবে। এর বিপুল প্রভাব পড়বে শহরের গণপরিবহণ ব্যবস্থায়। সম্পূর্ণ মেট্রোপথে পরিষেবা শুরু হলে সারা দিনে ট্রেনের সংখ্যা যেমন অনেকটা বাড়াতে হবে, তেমনই বাড়বে যাত্রীদের সংখ্যা। সেই পরিস্থিতি সামলানোর জন্য স্টেশনগুলিতে কর্মী এবং রক্ষীর ব্যবস্থা কী ভাবে হবে, বড় হয়ে উঠছে সেই প্রশ্নই। হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্লানেডের মধ্যে পরিষেবা শুরু হওয়ার পরে সেখানে ভিড় সামলাতে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ১২০ জন কর্মী নেওয়া হয়েছিল। স্টেশনের প্রবেশপথে স্ক্যানার দেখাশোনা থেকে প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের ভিড় সামলানো, সব কাজই করছিলেন তাঁরা। কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে আচমকা প্রায় ৭০ জন কর্মীকে বসিয়ে দেওয়া হয় বলে খবর।

    বর্তমানে এই পথে দু’টি লাইনেই একটি করে ট্রেন চলে। ফলে, কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে কোন দিকে যাওয়ার ট্রেন পাওয়া যাবে, তা বুঝতে গিয়ে প্রায়ই দ্বিধায় পড়েন যাত্রীরা। স্টেশনে প্রয়োজনীয় কর্মী না থাকায় যাত্রীদের সহায়তা করারও বিশেষ লোক পাওয়া যায় না। এই অবস্থায় কোনও দিন বড় অঘটন ঘটলে কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে, তার উত্তর নেই।

    ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় পরিষেবার উপরে নজর রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণের ভার এত দিন ছিল নির্মাণসংস্থা কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল)-এর হাতে। সম্প্রতি সেই দায়িত্ব গিয়েছে মেট্রোর হাতে। কিন্তু বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের দিয়ে কী ভাবে, কোথায় কাজ করানো হবে, তা নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় মেট্রো স্টেশনে ওই কর্মীদের ব্যবস্থা করা যায়নি বলে সূত্রের খবর। এই আবহে মেট্রোর অভ্যন্তরে বেসরকারিকরণের জল্পনা ছড়িয়েছে। শীর্ষ কর্তাদের একাংশ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোকে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনের হাতে তুলে দিতে চান বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

    প্রকল্পের সমীক্ষা অনুযায়ী, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর যাত্রী সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হওয়ার কথা। ফলে, কলকাতা মেট্রোর সবচেয়ে সম্ভাবনাময় পথকে কেন বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে, সেই প্রশ্ন আগেই উঠেছিল। বেসরকারিকরণ নিয়ে মেট্রোর শীর্ষ কর্তার মনোভাবের বিরোধিতা করায় সম্প্রতি এক বিভাগীয় প্রধানকে রাতারাতি বদলি করার অভিযোগও উঠেছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য পুরো বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

    তবে কলকাতা মেট্রোর সরকারি কর্মী সংগঠন ‘মেট্রো রেলওয়ে মেন্‌স ইউনিয়ন’ এই সিদ্ধান্তের সর্বতোভাবে বিরোধিতা করবে বলে জানিয়েছে। কলকাতা মেট্রোর অপর এক সংগঠন, ‘প্রগতিশীল কর্মচারী ইউনিয়ন’-এর সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করে কাজ চালানোর বিরুদ্ধে। মেট্রো এখন স্বীকৃত আলাদা জ়োন। রেল মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলে কর্মীর ব্যবস্থা করা হোক। যাত্রী সুরক্ষার সঙ্গে আপোস মানা হবে না।’’

    সার্বিক এই টানাপড়েনের মধ্যে শিয়ালদহ থেকে এসপ্লানেডের মধ্যে কবে ও কী অবস্থায় পরিষেবা শুরু হবে, অনুচ্চারিত থেকে যাচ্ছে সেই বিষয়টাই।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)