চারমাসের লড়াই শেষ। শেষ ইচ্ছে ছিল কোলের সন্তানকে ছুঁয়ে দেখা। কিন্তু সেই ইচ্ছাও অপূর্ণ রয়ে গেল। স্যালাইন কাণ্ডে চিকিৎসাধীন নাসরিন খাতুনের মৃত্যু হল এসএসকেএম হাসপাতালে। রবিবার রাত ১১টা নাগাদ চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছিল নাসরিনের। চলছিল ডায়ালিসিসও। একটানা ডায়ালিসিসের জেরে ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল তাঁর। স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, মাল্টি অর্গান ফেলিওর হয়েই মৃত্যু হয়েছে ওই প্রসূতির।
গত ১২ জানুয়ারি থেকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন নাসরিন। নাসরিনের জামাইবাবু ইনসান আলি বলেন, ‘সপ্তাহখানে আগেই জেনারেল বেডে দেওয়া হয়েছিল নাসরিনকে। ১০ মে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। ৯ মে রাত থেকে ফের খিঁচুনি, বমি শুরু হয়। রবিবার রাতে নাসরিনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি।’ চিকিৎসকদের দাবি, একটানা ডায়ালিসিসের ধাক্কা সহ্য করতে পারেননি নাসরিন। সেই কারণেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এদিকে নাসরিন খাতুনের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তাঁর স্বামী সেলিম খান। তাঁর প্রশ্ন, ‘আমার সদ্যোজাত কন্যাসন্তানকে কী ভাবে মানুষ করব?’
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, ‘অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। রবিবার রাতে ডায়ালিসিস নিতে নিতেই মাল্টিঅরগ্যান ফেলিওরের জেরে নাসরিন খাতুনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। প্রথম থেকেই নাসরিনের অবস্থা ভালো ছিল না।সোমবার এসএসকেএমেই দেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। দেহ বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের তরফে গাড়ি পাঠানো হয়েছে।’
গত ৮ জানুয়ারি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে স্যালাইন দেওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন পাঁচ প্রসূতি। তাঁদের নাম – রেখা সাউ, মামণি রুইদাস, মাম্পি সিংহ, মিনারা বিবি ও নাসরিন খাতুন। ১০ জানুয়ারি ভোরে মারা যান মামণি রুইদাস নামে এক প্রসূতি। এই ঘটনায় রাজ্যে শোরগোল পড়ে যায়। এরপর নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পাশাপাশি আরএমও-সহ হাসপাতালের সুপার এবং এক জুনিয়র ডাক্তারকেও সাসপেন্ড করা হয়। ঘটনায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকার।
এরপর নাসরিন, মাম্পি ও মিনারাকে এসএসকেএমে নিয়ে আসা হয়। তিন জনেরই কিডনি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। চলছিল ডায়ালিসিস। তিন প্রসূতির চিকিৎসায় ১০টি বিভাগের ১৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়ে তৈরি হয়েছিল মেডিক্যাল বোর্ড। ফেব্রুয়ারিতে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান মাম্পি ও মিনারা। থেকে গিয়েছিলেন কেশপুরের ন্যাড়াদেউলের বাসিন্দা নাসরিন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ধীরে ধীরে নাকি সুস্থতার পথেই এগোচ্ছিলেন নাসরিন। আইসিইউ থেকে জেনারেল বেডেও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তবে ৯ মে থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। রবিবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর।