‘আগের মতো কি আর কোনওদিন সুস্থ হতে পারব আমি…?’, মেদিনীপুর স্যালাইন কাণ্ডে অসুস্থ নাসরিনের মৃত্যু সংবাদ শুনে মনের মধ্যে নতুন করে প্রশ্নটা জেগে উঠেছে শালবনির মাম্পি সিংয়ের মনেও। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রিঙ্গার্স ল্যাকটেট স্যালাইন নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া প্রসূতির তালিকায় ছিলেন মাম্পি সিংও। ঘটনার চার মাস বাদে সোমবার সকালে নাসরিন খাতুনের মৃত্যুতে নতুন করে ভেঙে পড়েছেন তিনি।
কেশপুরের নাসরিন খাতুনের মৃত্যুর খবর এদিন কাঁদতে কাঁদতে মাম্পি বলেন, ‘আমার জীবনেরও তো কোন গ্যারান্টি নেই! ডাক্তারবাবুরা সুস্থ বলে বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু, এক-দু’বছর পরে যে আবার সমস্যা হবে না, তার কোনও ভরসা পাচ্ছিনা। নিজের উপর বিশ্বাস বলে আর কিছু নেই! আগের মতো পরিশ্রম করা তো দূরের কথা, হাঁটতে-চলতে গেলেও দুর্বল লাগে। একটু কাজ করার চেষ্টা করলেই হাঁপিয়ে যাই...আগের মতো কি আর কোনদিন সুস্থ হতে পারব আমি?’ এখানেই শেষ নয়, সন্তানের ভবিষ্যত নিয়েও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তিনি। বলছিলেন, ‘নাসরিনের ছোট্ট মেয়েটার জন্য তো খারাপ লাগছেই। সেইসঙ্গে এটাও ভাবছি, আমারও যদি কিছু হয়ে যায়, আমার এই ছোট ছোট দু'টো মেয়ের কী হবে!’
কাঁদতে কাঁদতেই বছর ২৩-এর মাম্পি সিংয়ের আফসোস, মেয়েকে কোনও দিন স্তন্যপান করাতেই পারলেন না। কারণ- স্যালাইনের সমস্যায় শরীরে হওয়া পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় আজও ভুগে চলেছেন তিনি বলে দাবি।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী এই সময় অনলাইন-কে জানান, ‘অ্যাম্বুল্যান্সের বিষয়ে যে অভিযোগ, আপনাদের মাধ্যমেই আমার কাছে পৌঁছল। এই সমস্যা ভবিষ্যতে আর হবে না। শিশুটির খাবারের বিষয়টিও আমি দেখছি। প্রশাসন তথা আমরা সবসময়েই ওই পরিবারগুলির পাশে আছি।’
প্রসঙ্গত, গত ৮ জানুয়ারি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের 'মাতৃমা' বিভাগে সিজারের পরই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন নাসরিন, মাম্পি, মিনারা, মামনি, রেখা-সহ পাঁচ প্রসূতি। মিনারা, নাসরিন ও মাম্পির অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় এসএসকেএম হাসপাতালের ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রেখে তাঁদের চিকিৎসা চলে। কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে প্রথম থেকেই তাঁদের ডায়ালিসিস চলছিল বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা যায়। গত ১২ মার্চ অবশেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন মাম্পি।