• দুঃস্থ পরিবারের ৩ মেধাবীর সাফল্যে খুশি সুতাহাটা ও মহিষাদলবাসী
    বর্তমান | ১৩ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, হলদিয়া: অভাবী পরিবারের তিন মেধাবী পড়ুয়ার সাফল্যে গর্বিত সুতাহাটা ও মহিষাদলের বাসিন্দারা। মহিষাদলের লক্ষ্যার মানস সামন্ত, কুঁকড়াহাটির বর্ণালি হাজরা ও সুতাহাটার আশদতলিয়ার শ্বেতা দাস-তিনজনই শ্রমিক পরিবারের সন্তান। কোনও গৃহশিক্ষক ছাড়াই ‘সেল্ফ স্টাডি’ করে কেউ বিজ্ঞান বিভাগে, কেউ কলা বিভাগে নজরকাড়া নম্বর পেয়েছেন। তিনজনই নিজেদের স্কুলে প্রথম হয়েছেন।এবার উচ্চমাধ্যমিকে ৯৬শতাংশ নম্বর পেয়েছেন মহিষাদলের লক্ষ্যা হাইস্কুলের মানস সামন্ত। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৮২। মাত্র ছ’নম্বরের জন্য মেধা তালিকায় ঢুকতে পারেননি বলে মানসের খেদ রয়েছে। লক্ষ্যা হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ মানসের মার্কশিট সহ ছবি বড় করে ফ্লেক্সে ছাপিয়ে স্কুলের সামনে লাগিয়েছে। মানস বাংলায় ৯৬, ইংরেজিতে ৯৫, গণিতে ৯৪, রসায়নে ৯৫, পদার্থবিদ্যায় ৯৭ এবং জীববিদ্যায় ৯৯ পেয়েছেন। তাঁর বাবা পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন। মা গৃহবধূ। করোনার পর তাঁর বাবা বাড়ি ফিরে এসেছেন। ছেলেকে প্রাইভেট টিউশনি দেওয়ার সামর্থ্য তাঁর ছিল না। মানস বলেন, পদার্থবিদ্যা আমার প্রিয় বিষয়। যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছে রয়েছে। কিন্তু, অত টাকা আমাদের নেই। অধ্যাপক দেবব্রত জানা আমার পড়াশোনার জন্য আর্থিক সাহায্য করেছেন। মানসের স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস পাহাড়ী বলেন, ও সবসময় ক্লাসে প্রথম হতো। স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করেছে।

    কলা বিভাগে ৯৩শতাংশ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়েছেন সুতাহাটার এড়িয়াখালি গ্রামের বর্ণালি হাজরা। কুঁকড়াহাটি হাইস্কুলের এই কৃতীর প্রাপ্ত নম্বর ৪৬৯। তিনি বাংলায় ৯২, ইংরেজিতে ৯০, ভূগোলে ৯৫, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৯৫, শারীরশিক্ষায় ৯৭ ও শিক্ষাবিদ্যায় ৮০ পেয়েছেন। ভবিষ্যতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষকতা করতে চান।

    বর্ণালির বাবা সুরেশ হাজরা হলদিয়া বন্দরের অস্থায়ী শ্রমিক। মা শঙ্করী হাজরা গৃহবধূ। তিন বোনের মধ্যে বর্ণালি ছোট। পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকতে ভালোবাসেন। তাঁর সাফল্যে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও গ্রামবাসীরা খুশি। বর্ণালির স্কুলের প্রধান শিক্ষক শচীন্দ্রনাথ মাটিয়া বলেন, অভাবী পরিবারের বর্ণালি দারুণ রেজাল্ট করে আমাদের স্কুলকে গর্বিত করেছে। বর্ণালি বলেন, রাজ্য সরকারের স্কলারশিপ ও কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকাতেই বই কেনা, পড়াশোনা করেছি। সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অশোক মিশ্র বলেন, বর্ণালি সুতাহাটা ব্লকের গর্ব। কন্যাশ্রী প্রকল্প কীভাবে ওকে পড়াশোনায় সাফল্য এনে দিয়েছে-তা মডেল হিসেবে তুলে ধরা হবে।

    সুতাহাটার অপর এক কৃতী ছাত্রী শ্বেতা দাসও সবার নজর কেড়েছেন। সারদামণি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্বেতা উচ্চমাধ্যমিকে ৪৫১নম্বর পেয়েছেন। তিনি বাংলায় ৮৬, ইংরেজিতে ৯৩, গণিতে ৭২, পদার্থবিদ্যায় ৯১, রসায়নে ৮৬ ও জীববিদ্যায় ৯৫ পেয়েছেন। শ্বেতা চিকিৎসক হতে চান। তাঁর মা বলেন, মেয়ে ডাক্তারি পড়তে চায়। কিন্তু, এতে প্রচুর খরচ। ওর বাবা সামান্য অস্থায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। কীভাবে সেই খরচ জোগাড় করব-বুঝতে পারছি না।
  • Link to this news (বর্তমান)