প্রথম বিভাগে পাশ করে বাবাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখলেন বোলপুরের সুস্মিতা
বর্তমান | ১৩ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, বোলপুর: উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন মৃত্যু হয় বাবার। শিক্ষাজীবনের অন্যতম বড় পরীক্ষার মাঝে বাবাকে হারিয়ে কার্যত ভেঙে পড়েন বোলপুর শিক্ষানিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী সুস্মিতা সাহানি। কিন্তু তার পরের পরীক্ষাগুলি মনের জোরে দিয়ে প্রথম বিভাগে পাশ করলেন তিনি। ৬৮ শতাংশ পেয়েছেন সুস্মিতা। বেঁচে থাকতে বাবাকে সুস্মিতা কথা দিয়েছিলেন প্রথম বিভাগে পাশ করবেন। সেই কথা রাখলেন তিনি। তাঁর এই অদম্য জেদকে কুর্নিশ জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। প্রতিকূল সময়েও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মনোভাব নিয়ে সুস্মিতা যা করে দেখালেন, তাতে গর্বিত স্কুল কর্তৃপক্ষ। উচ্চশিক্ষায় তাঁর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশান্তকুমার দাস।
সুস্মিতার বাড়ি বোলপুরের মকরমপুরে। প্রায় চার বছর ধরে ওই এলাকার রাস্তা কঙ্কালসার অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি সে রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করেছে পূর্ত দপ্তর। মেয়ের পরীক্ষা উপলক্ষ্যে পেশায় গাড়িচালক মহাদেব সাহানি দুর্গাপুর থেকে বোলপুরে ফিরছিলেন। কিন্তু ওই রাস্তায় তাঁর সাইকেল পাথরে লেগে উল্টে যায়। তাতেই মহাদেব মাথায় গভীর আঘাত পান। এরপর ‘ব্রেন হ্যামারেজ’-এ তাঁর মৃত্যু হয়। ওইদিন ছিল সুস্মিতার ইংরেজি পরীক্ষা। বাবার মৃত্যুতে তিনি দিশাহারা হয়ে পড়েন। মানসিকভাবে ভেঙে প’ড়ে সুস্মিতা পরীক্ষা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর স্কুলের শিক্ষকরা পাশে থেকে তাঁকে পরীক্ষার জন্য রাজি করান।
রাজ্যস্তরের ভলিবল খেলোয়াড় হওয়ার সুযোগ ছেড়ে শুধুমাত্র বাবার কথা রাখতে পরীক্ষাকেই পাখির চোখ করেছিলেন সুস্মিতা। বাবার অকাল প্রয়াণে স্বভাবতই দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পরীক্ষা দেওয়ারও মানসিক শক্তিও ছিলনা। বাবাকে বলেছিলেন,‘আমার রেজাল্ট দেখে নিও, ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করব।’ তিনি তাই করলেন। কিন্তু ফলাফল বাবাকে দেখাতে না পেরে এদিন স্বভাবতই মন খারাপ ছিল সুস্মিতার। বোলপুর শিক্ষানিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্রী বাংলায় ৮০, ইংরেজিতে ৪৩, দর্শনে ৬৪, সংস্কৃতে ৮১ এবং শরীর শিক্ষায় ৭১ নম্বর পেয়ে মোট ৩৪০ অর্থাৎ ৬৮ শতাংশ নম্বর অর্জন করেছে। ইংরেজি পরীক্ষার দিনে বাবার মৃত্যুর ঘটনায ওই বিষয়ে নম্বর কিছুটা কম হয়েছে। নাহলে, নম্বর আরও বাড়ত, এমনই তাঁর দাবি। নিজের সাফল্যের বিষয়ে সুস্মিতা বলেন, ‘শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম। সেই কঠিন সময়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকরা যেভাবে উৎসাহিত করেছিলেন, তাতেই এই সাফল্য এসেছে। বাবার স্বপ্ন ছিল প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হব। আজ সেই স্বপ্নপূরণ হলেও, তা দেখার জন্য বাবা পাশে নেই – এটাই আক্ষেপ।’ তবে তাঁর এখন স্বপ্ন পুলিস অফিসার হওয়া। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, সুস্মিতার মনের জোর সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। শোকের মুহূর্তেও যেভাবে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে, তা আগামীদিনে সকলের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।