• মাড়গ্রামে উদ্ধার প্রচুর পরিমাণ বোমা, আতঙ্ক
    বর্তমান | ১৩ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট : সোমবার সকালে ফের মাড়গ্রামের বেনেগ্রাম থেকে উদ্ধার হল প্রচুর বোমা। যা উস্কে দিল ২৩ বছর আগের ভয়াবহ স্মৃতি। সেই সময় এই গ্রামে বোমা বিস্ফোরণে এক শিশু সহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।  স্বভাবতই এদিন এত পরিমাণ বোমা উদ্ধার ঘিরে আতঙ্কিত গ্রামের সাধারণ মানুষ। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও।  

    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে তাঁদের কাছে খবর আসে রামপুরহাট–মাড়গ্রাম রোডের ধারে বেনেগ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে প্রচুর বোমা মজুত রয়েছে। সেই মতো পুলিস এসে বাড়িটিতে তল্লাশি চালিয়ে দেখে তিনটি পৃথক রঙের প্লাস্টিক জারে বোমাগুলি রাখা। পুলিস বাড়িটিকে ঘিরে রেখে বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডকে খবর দেয়। পুলিস জানিয়েছে, তিনটি জার মিলিয়ে প্রায় ৬০ পিস তাজা বোমা মজুত রাখা হয়েছে। তবে কারা বোমাগুলি মজুত করেছিল, তা সোমবার বিকেল পর্যন্ত অজানা। পুলিস জানিয়েছে, কে বা কারা কী উদ্দেশ্যে বোমাগুলি মজুত করেছিল, তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।

    তবে এই বোমা উদ্ধার গ্রামবাসীদের ২৩ বছর আগের স্মৃতি উসকে দিয়েছে। ২০০২ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে এই গ্রামের একটি বাড়িতে বাইরে থেকে দুষ্কৃতী এনে বোমা বাঁধার কাজ চলছিল। ভোরের দিকে হঠাৎই বিস্ফোরণ ঘটলে এক শিশু সহ সাতজন মারা যায়। পরে হাসপাতালে আরও ছ’জনের মৃত্যু হয়। ফের এত পরিমান বোমা উদ্ধারের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এলাকার মানুষ। তাঁরা বলেন, নিশ্চয় বড়সড় গণ্ডগোলের জন্য বোমা বেঁধে তা সাপ্লাইয়ের জন্য মজুত করা হয়েছিল। যেভাবে জনবহুল রাস্তা ধারে এত পরিমান বোমা মজুত রাখা হয়েছিল তাতে এই প্রখর রোদ গরমে বিস্ফোরণ ঘটলে অনেকের প্রাণহানি ঘটত। তাঁরা দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারের দাবি তুলছেন। 

    ২০১৯ সালে নভেম্বর মাসে এই রাস্তার উপরে প্রকাশ্যে দখলবাটি গ্রামের তৃণমূল কর্মী মোশারফ হোসেন ওরফে বাবুল খানকে বোমা মেরে খুন করা হয়। অভিযোগ ওঠে দলেরই একটা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এরপরই পুলিস জানতে পারে, গোটা গ্রামটাই বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। যত্রতত্র মাটির নিচে বোমা লুকিয়ে রাখা হয়েছে। বম্ব স্কোয়াডের সদস্যরা এসে একের পর জায়গায় গর্ত করে মাটি সরিয়ে বোমা ভর্তি জার উদ্ধার করে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাড়গ্রামে বোমা মেরে দুই তৃণমূল কর্মীকে খুন করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, কোথা থেকে আসছে এত বোমা? প্রায়ই বীরভূমের একাধিক থানা এলাকায় মজুত বোমা উদ্ধারের ঘটনা সামনে আসছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে বীরভূম কী বোমা-বারুদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে? 

    বিজেপির জেলাস্তরের নেতা শান্তনু মণ্ডল বলেন, খোদ মুখ্যমন্ত্রী এই জেলার দায়িত্বে। সেখানে যদি এত বোমা উদ্ধার হয়, তাহলে রা঩জ্যের অন্যান্য এলাকার কী অবস্থা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে সামনে বিধানসভা ভোট। 

    বুথ দখল, রাজনৈতিক হিংসার জন্য তৃণমূল নেতারা এখন থেকেই দুষ্কৃতীদের দিয়ে বোমা মজুত করাচ্ছে। পুলিস সব জেনেও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। 

    যদিও এলাকার তৃণমূল নেতা সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি ভালো করেই জানে মাড়গ্রামে তাঁদের পায়ের তলায় মাটি নেই। নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ঢাকতে তৃণমূলের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। ২০২৬ সালের নির্বাচনে ওদের অবস্থা আরও খারাপ হবে। তাই এখন থেকেই উল্টোপাল্টা বকা শুরু করেছে। যারা বোমা মজুত করেছে তারা সমাজরিরোধী। পুলিস বিষয়টি দেখছে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)