সংবাদদাতা, ডোমকল: সাগরপাড়া সমবায় সমিতিতে ঋণের টাকা অনাদায়ী পড়ে থাকার ঘটনায় সর্ষের মধ্যেই ভূত দেখছেন প্রশাসনিক কর্তারা। স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও কৃষকদের নাম ব্যবহার করে ঘুরপথে ঋণের টাকা গিয়েছে প্রভাবশালীদের কাছে। এমনকী নাম ভাড়িয়ে নেওয়া ঋণের টাকা ইনভেস্ট করা হয়েছে বেসরকারি বিএড কলেজেও। সাগরপাড়ার সাহেবনগর সবুজ সঙ্ঘ সমবায় সমিতির ওপর প্রশাসনিক কর্তাদের নজর পড়তেই উঠে আসছে দুর্নীতির এমনই ছবি।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সালে সাগরপাড়ার সাহেবনগরে তৈরি হয়েছিল ওই ব্যাঙ্ক। বর্তমানে গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১১০০-এর কাছাকাছি। সূত্রের খবর, ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮ কোটি টাকা এই ব্যাঙ্ক থেকে লোন দেওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে কৃষি ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫ কোটি ১১ লক্ষ টাকা আর স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ঋণ দেওয়া হয়েছিল প্রায় ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু সূত্রের খবর, গ্রহীতারা কেউ ঋণ পরিশোধ করেননি। বর্তমানে সুদে আসলে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ১২ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। তবে এতদূর পর্যন্ত আপাত দৃষ্টিতে দেখলে খুব বেশি গড়বড় মনে হবে না। কিন্তু প্রশাসনিক কর্তাদের নজর এড়ায়নি দুর্নীতির আসল ছবিটা। সমবায় ম্যানেজার ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সভার শেষে কাগজে কলমে উঠে এসেছে দুর্নীতির কথা।
জানা গিয়েছে, ওই সময়ে কয়েক হাজার গ্রাহকের তমসুকের তালিকা পাঠিয়ে ওই কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া হয়। তারপর দীর্ঘদিন ধরে ওই ঋণ অনাদায়ী হয়ে পড়ে থাকলেও ব্যবস্থা নেয়নি সমবায় কর্তৃপক্ষ। এমনকী প্রশাসনিক স্তর থেকে একাধিকবার ঋণগ্রহীতাদের তালিকা চাওয়া সত্ত্বেও তা দিতে পারেননি সমবায়ের ম্যানেজার। এরপরে প্রশাসনিক কর্তারা যোগাযোগ করেন ওই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে। তাঁদের থেকে উদ্ধার করা যায় মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ জনের তমসুক। এরপরে তা খতিয়ে দেখতেই বেরিয়ে আসে একের পর এক দুর্নীতি। দেখা যায়, একই বাড়ির একাধিক সদস্যের নামে নেওয়া হয়েছে ঋণ। আবার দেখা যায়, একই ব্যক্তি একাধিক নামে ঋণ নিয়েছে। কৃষকদের নাম ভাড়িয়ে তাঁদের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে পর্যন্ত লোন তোলা হয়েছে। পাশপাশি তাঁরা লক্ষ্য করেন, ওই বাড়ির একাধিক সদস্যের নামে ঋণ নিয়ে সেই টাকা ইনভেস্ট করা হয়েছে এলাকার একটি বেসরকারি বিএড কলেজে। ইনভেস্টরের তালিকায় খোদ সমবায়ের বর্তমান ম্যানেজার আব্দুস সাত্তারও রয়েছে। রয়েছে তৎকালীন সময়ের ওই কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কের ম্যানেজারও। সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত যা উঠে আসছে, তাতে লোনের টাকা ব্যবহার করে কলেজে ইনভেস্টমেন্টের পরিমাণ প্রায় কোটি ছাড়িয়ে যাবে। পরিস্থিতি দেখতে বৃহস্পতিবার ওই ব্যাঙ্কে যান জলঙ্গি ব্লকের সমবায় পরিদশর্ক মহম্মদ আসাদুজ্জামান। বৃহস্পতিবার সভা শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ১৩ মে-র মধ্যে কলেজের ইনভেস্টরদের বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। সমস্ত অনাদায়ী ঋণের হিসেব জমা করতে হবে। জলঙ্গি ব্লকের সমবায় পরিদর্শক মহম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ২০১১ সাল থেকে ওই ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ও তৎকালীন সময়ের ওই কমিটির পরামর্শে প্রায় ৮ কোটি টাকা লোন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা ওই লোন আদায়ের ব্যবস্থা করেননি। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ওই টাকা ভাড়িয়ে সিন্ডিকেট করা হয়েছে, লোকাল কিছু কলেজেও ইনভেস্ট করা হয়েছে।