• জিনাত ও রাজার দৌলতে শিকার উৎসবে স্বস্তি বাঁকুড়া বনদপ্তরের
    বর্তমান | ১৩ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: জিনাত ও রাজার ‘সৌজন্যে’ শিকার উৎসবে স্বস্তি পেল বাঁকুড়া জেলা বনদপ্তর। মাস তিনেক আগে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে গিয়েছে ওই দুই রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তারপর থেকেই জঙ্গলের যত্রতত্র যাতায়াতের প্রবণতা কমে গিয়েছে। ফলে বুদ্ধ পূর্ণিমার শিকার উৎসবেও বেশি মানুষ গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করেনি। ফলে বহু বন্যপ্রাণী রক্ষা পেয়েছে। যদিও টানা সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়ার ফলেই বেআইনি পশু শিকার কমেছে বলে বনদপ্তরের তরফে দাবি করা হয়েছে। তবে স্থানীয়দের বক্তব্য, জিনাত খাঁচাবন্দি হলেও তার পিছু ধাওয়া করে আসা পুরুষ বাঘ রাজা ধরা পড়েনি। সে বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানাতেই ঘাপটি মেরে রয়েছে বলে জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা মনে করেন। সেই কারণে এখনও ঝাড়খণ্ড ঘেঁসা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামের ঘন জঙ্গলে সচরাচর বাসিন্দারা যান না।

    বাঁকুড়া দক্ষিণের ডিএফও প্রদীপ বাউরি বলেন, শিকার উৎসব ও জঙ্গলে আগুন লাগানোয় রাশ টানতে আমরা গত কয়েকমাস ধরে টানা প্রচার করছি। বনকর্মীদের পাশাপাশি ‘জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটি’র সদস্যদেরও ময়দানে নামানো হয়েছিল। প্রশাসন ও পুলিসের সঙ্গেও সমন্বয় রেখে কাজ করা হয়েছে। তার ফলে গতবারের তুলনায় এবার জঙ্গলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অনেক কম। শিকার উৎসবে বন্যপ্রাণি হত্যা আটকাতে আমরা শনিবার থেকে জঙ্গলে টানা নজরদারি চালাচ্ছি। সোমবার আমি সারেঙ্গার পিড়লগাড়ি রেঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখেছি। এডিএফও পদমর্যাদার আধিকারিকরা রানিবাঁধে নজর রেখেছিলেন। এতে পশু শিকার অনেকাংশে বন্ধ করা গিয়েছে। এছাড়াও পরপর দু’টি বাঘ বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে এসেছিল। জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্র উন্নত হওয়ার কারণেই বাঘগুলি এই জেলার বনে থাকতে পেরেছে। বাঘ জঙ্গলে থাকলে সচরাচর মানুষ প্রবেশ করতে ভয় পায়। 

    খাতড়া মহকুমার এক পুলিস আধিকারিক বলেন, বনদপ্তরের পাশাপাশি আমরাও জঙ্গলমহলে নজরদারি চালাচ্ছি। নির্বিচারে পশু শিকার করা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা হয়েছে। 

    উল্লেখ্য, বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে বহু বছর ধরেই জঙ্গলমহলে শিকার উৎসব পালিত হয়ে আসছে। শিকার উৎসব মূলত পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে হয়। তবে বাঁকুড়ার দক্ষিণ বনবিভাগ এলাকাতেও পূর্ণিমার রাতে অনেকে জঙ্গলে পশু শিকার করেন। শুশুনিয়া, বিহারিনাথ পাহাড়েও পশু শিকার করা হয়ে থাকে। বাঁকুড়ার জঙ্গলে থাকা হরিণ, বন শুয়োর, ময়ূর, বন মোরগ, খরগোশ সহ অন্যান্য পশু পাখি শিকার করা হয়। পরদিন শিকারিরা ওইসব পশুপাখির মাংস খেয়ে থাকেন। কেউ কেউ আগুনে ঝলসে নিয়েও পশুর মাংস খান। যদিও পশুহত্যা বেআ‌঩ইনি বলে বনদপ্তর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বারিকুল এলাকার এক শিকারি বলেন, আগের মতো আমরা নির্বিচারে বন্যপশু হত্যা করি না। তবে প্রথা মেনে এখনও বুদ্ধ পূর্ণিমার রাতে জঙ্গলে যাই। বাঘের ভয়ে অনেকেই এবার গভীর জঙ্গলে যাবে না। শিকার না পেলেও মনে কোনও খেদ থাকবে না। নিয়মরক্ষার শিকারপর্ব শেষ করার পর জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় ব্রয়লার অথবা দেশি মুরগির মাংস দিয়ে বনভোজন সেরে বাড়ি ফিরব।  জঙ্গলে প্রাণী হত্যা রুখতে চেকিং। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)