• আউশগ্রামের লবণধারে বুদ্ধপূর্ণিমায় ধর্মরাজের গাজনে মেতে গ্রামবাসীরা
    বর্তমান | ১৩ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, মানকর: সোমবার বুদ্ধপূর্ণিমায় আউশগ্রামের লবণধার গ্রামের বাসিন্দারা ধর্মরাজের গাজন উৎসবে মেতে উঠলেন। প্রাচীন রীতি মেনে এখনও প্রতিবছর এখানে দেবতার বিগ্রহ ‘চুরি’ হয়। এখানে ধর্মরাজের নাম স্বরূপনারায়ণ। গাজন উপলক্ষ্যে যাত্রা, বাউলগানের আসর বসে।ধর্মমঙ্গল গ্রন্থ অনুসারে এখানে পুজো হয়। স্বরূপনারায়ণের গাজনে বেশকিছু বিশেষত্ব রয়েছে। এখানে বহু প্রাচীন রীতি এখনও পালন করা হয়। এখানকার বিশেষ রীতি হল তালগাছ তোলা। গাজন সন্ন্যাসীরা ধর্মরাজের সিংহাসনে পদ্মফুল চাপান। তারপর প্রধান সন্ন্যাসী হাত পেতে দেবতার কাছে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করতে থাকেন। ফুলটি একসময় ব্রাহ্মণের হাতে পড়ে। সেটি প্রধান সন্ন্যাসীকে দেওয়া হয়। তিনি ফুল হাতে পেয়ে আবিষ্ট হয়ে দৌড়তে শুরু করেন। ফুল সমেত যে তালগাছটি প্রধান সন্ন্যাসী স্পর্শ করেন, সেটিকেই শিকড় সমেত তুলে ফেলা হয়। তোলার সময় তালগাছের কোনও অংশ ভেঙে গেলে সেটিকে বাদ দিয়ে নতুন তালগাছ তুলতে হয়। গাজন উপলক্ষ্যে এখানে কপালি বাণ ফোঁড়া হয়। অর্থাৎ সন্ন্যাসীরা কানের লতি ফুটো করেন। হবিষ্যির সময় সন্ন্যাসীদের কানে আওয়াজ গেলে খাবার খাওয়া সেখানেই বন্ধ রাখতে হয়। কথিত আছে, একটি শঙ্খচিল উড়ে এসে লবণধারের নির্দিষ্ট জায়গায় বসত। স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেখানেই ধর্মরাজের পুজো শুরু হয়। একসময় এই গ্রাম বর্ধমানের রাজাদের অধীনে ছিল। বিষ্ণুর পদচিহ্ন সম্বলিত দু’টি প্রস্তরমূর্তিতে ধর্মরাজপুজো হয়। তার মধ্যে একটি এখন লবণধারের কাছে পরিশা গ্রামে থাকে। অন্য মূর্তিটি লবণধারেই সারাবছর পূজিত হয়। তবে গাজনের সময় পরিশা থেকেও মূর্তিটি নিয়ে আসা হয়। গাজন শেষ হওয়া অবধি দুই দেবতা লবণধার গ্রামেই অবস্থান করেন।কথিত আছে, পরিশা গ্রামে রায় পরিবারের কোনও পুত্রসন্তান বাঁচত না। দেবতা লবণধার থেকে মূর্তি এনে পুজো করতে স্বপ্নাদেশ দেন। এরপর আবেগের বশে ওই পরিবার একটি মূর্তি চুরি করে নিয়ে যায়। সেই থেকে একটি মূর্তি পরিশা গ্রামেই পূজিত হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দা মহাদেব রায়, শ্রীধর রায় বলেন, পাটভাঙা পর্বের মধ্য দিয়ে গাজন শেষ হয়। সন্ন্যাসীরা উঁচু মাচার উপরে ওঠেন। নীচে খড় ও তার উপর একটি বস্তা পাতা হয়। বস্তার উপর তীরের ফলা লাগানো থাকে। সন্ন্যাসীরা মাচায় উঠে ওই তীরের ফলার উপর ঝাঁপ দেন। প্রতিবছর এই গাজন দেখতে দেবশালা, পরিশা, মানকর, ভাতকুণ্ডা থেকে বহু মানুষ ভিড় করেন।
  • Link to this news (বর্তমান)