এই সময়: দিনের ছবিটা কিছুটা বদলে গেল রাতে। সোমবার দক্ষিণবঙ্গের অন্তত সাতটি জায়গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি। কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (৩৮.৬) ৪০-এর কোঠা না-ছুঁলেও ভ্যাপসা গরমে দিনভর ছিল অস্বস্তি। তবে সন্ধের পর থেকে বদলাল পরিস্থিতি।
রাতে স্থানীয় ভাবে তৈরি বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে প্রবল ঝোড়ো হাওয়া ও সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিতে এক ধাক্কায় নেমে এল সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ। শুধু কলকাতা নয়, লাগোয়া দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের কয়েক জায়গাতেও ভালো বৃষ্টি হয়েছে।
এই হাওয়া-বদলে রাতে কলকাতার তাপমাত্রা নেমে আসে ৩১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দমদমে এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যেখানে ৪০.৩ ডিগ্রি, রাতে তা নেমে আসে ৩১.৩ ডিগ্রিতে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই মুহূর্তে প্রচণ্ড গরমের হাত থেকে দক্ষিণবঙ্গকে রেহাই দেওয়ার মতো কোনও ‘পোক্ত’ ওয়েদার সিস্টেম নেই।
তবে বিহার থেকে দক্ষিণ ঝাড়খণ্ড পর্যন্ত ভূপৃষ্ঠ থেকে দেড় কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা রয়েছে। তার প্রভাবে জলীয় বাষ্প এমনিতেই ঢুকছে দক্ষিণবঙ্গের বাতাসে। তা থেকেই স্থানীয় ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়ে এই ঝড়বৃষ্টি হয়েছে।
আগামী কয়েক দিনও এই স্থানীয় ঝড়-বৃষ্টিতেই দক্ষিণবঙ্গে সামান্য স্বস্তি মিলতে পারে। তবে এই পরিস্থিতিতেও এ বারের বর্ষার জন্য আশার বাণী শোনাল মৌসম ভবন। নির্ধারিত ১ জুন নয়, তার অন্তত পাঁচ দিন আগে অর্থাৎ ২৭ মে নাগাদ কেরালায় হাজির হতে চলেছে ভারতীয় অর্থনীতির ‘লাইফলাইন’ দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বাতাস—এমনই পূর্বাভাস মৌসম ভবনের।
একই সঙ্গে আবহবিদরা জানাচ্ছেন, এই মরশুমে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশিই বৃষ্টি পেতে চলেছে ভারত। প্রসঙ্গত, বেসরকারি সংস্থা ‘স্কাইমেট’ মার্চের শেষে জানিয়েছিল, ২০২৫–এ ভারত ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টি পেতে চলেছে। তবে কেরালায় বর্ষা ঢোকা আর বাংলায় বর্ষা ঢোকার মধ্যে বিস্তর ফারাকও রয়েছে।
২০২৪–এ কেরালায় বর্ষা ঢুকেছিল ৩০ মে, উত্তরবঙ্গে ৩১ মে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা শুরু হতে ২৭ জুন হয়ে গিয়েছিল। বর্ষার চার মাসে গোটা দেশে গড়ে ৮৭ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের ৯৬ শতাংশ থেকে ১০৪ শতাংশের মধ্যে থাকলে অর্থাৎ ৮৩.৫ সেন্টিমিটার থেকে ৯০.৪ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ‘স্বাভাবিক’ মনে করে মৌসম ভবন।
সংস্থার পূর্বাভাস, এ বছর হয়তো ৯০.৪ সেন্টিমিটারের চেয়ে বেশিই বৃষ্টি হতে চলেছে। এমনিতে সারা বছর গোটা দেশ যে পরিমাণে বৃষ্টি পায়, তার প্রায় ৭৫ শতাংশই হয় বর্ষার চার মাসে। সুতরাং দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বাতাসের গতিবিধির উপরে কড়া নজর থাকে আবহবিদদের। জলীয় বাষ্পে পরিপূর্ণ এই বাতাসের ‘ঠিক সময়ে’ দেশে ঢোকা অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজির (আইআইটিএম) আবহবিদরা জানাচ্ছেন, ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত মৌসুমি বায়ু কেরালায় সবচেয়ে বেশি দেরিতে ঢুকেছে ২০১৯ ও ২০২৩–এ। এই দু’বছরই ১ জুনের পরিবর্তে ৮ জুন দেশে বর্ষা শুরু হয়েছিল। ২০২৩–এ দেশের বিভিন্ন অংশে খরাও হয়েছিল।
তবে ২০২৪–এ একসঙ্গে দু’টি ঘটনা খরা পরিস্থিতিকে অনেকটাই সামলে দেয়। প্রথমত, গত বছর দেশে বর্ষা শুরু হয়েছিল ৩০ মে। এবং দ্বিতীয়ত, ২০২০–র পর ২০২৪–এ দেশ সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি পেয়েছিল।
আবহবিদরা বলছেন, ‘প্রতি বছরই আমাদের নতুন করে শুরু করতে হয়। দেশে দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বাতাসের প্রবেশের নেপথ্যে একাধিক বিষয় কাজ করে। তাই প্রতি বছরই মৌসুমি বাতাসের প্রবেশের সময় বদলে যায়। এ বছর ২৭ মে কেরালায় বর্ষা ঢুকবে বলেই আশা করা হচ্ছে। সেই পূর্বাভাস কতটা মেলে আপাতত সেটাই দেখার।’