• ভারত-পাক যুদ্ধের আবহে প্রস্তুতি মেডিক্যাল কলেজেও
    এই সময় | ১৩ মে ২০২৫
  • এই সময়: আপাতত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হলেও সীমান্তপারে উত্তেজনায় ইতি পড়েনি। এমন যুদ্ধকালীন আবহের প্রতিফলন ঘটেছে সারা দেশেই। এ বারে হামলা আর পাল্টা হামলা দেখা গিয়েছে মূলত আকাশ পথেই। সাইবার হামলার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

    রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে তাই হ্যাকিংয়ের মোকাবিলায় হাসপাতালগুলির ওয়েবসাইটগুলিকে আপাতত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে স্বাস্থ্যভবনে। ওয়েবসাইটগুলি আমজনতার জন্য কার্যত এখন বন্ধই। একমাত্র অনলাইন আউটডোর টিকিট কাটার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।

    ভারত-পাক অশান্তির আবহে স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কাছে তাদের নিজস্ব পরিকাঠামো ও ব্যবস্থা নিয়ে তথ্যও চাওয়া হয়েছি‍ল। সেই মতো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষগুলি আরও একবার ঝালাই করে নিচ্ছেন নিজেদের পরিকাঠামোর বিস্তারিত তথ্য।

    স্বাস্থ্যভবনে পাঠানোর জন্য রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী সব স্তরের সরকারি কর্মীর ছুটিও বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতাল কর্মীরাও রয়েছেন।

    স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, হাসপাতালের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, সেখানে ব্ল‍্যাকআউট করা যায় না। অন্ধকারে রোগীদের চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, প্রসিডিয়োর ইত্যাদি করা যায় না। এ ছাড়াও রাজ্যের বেশিরভাগ হাসপাতাল এখন বহুতল ভবন।

    সেখান থেকে রোগীদের ‘ইভ্যাকুয়েট’ করাও ঝামেলার। তবে প্রয়োজনে তা দ্রুত করা যায় কি না, তার ভাবনাচিন্তা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা মেনে সব হাসপাতালের সব ধরনের পরিষেবা যাতে নিরবচ্ছিন্ন থাকেয, সেই দিকটিতেও নজর রাখা হয়েছে।

    কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার অঞ্জন অধিকারী বলেন, ‘স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে আমাদের পরিকাঠামো প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী আমরা সব ব্যবস্থা আবার ঝালাই করে নিচ্ছি। কোথায় কত ওষুধ, অক্সিজেন, চিকিৎসার প্রয়োজনীয় যন্ত্র আছে, হিসেব করছি।’

    তিনি জানান, ইমার্জেন্সি বিভাগ বা ক্রিটিক্যাল কেয়ারে যদি অতিরিক্ত রোগীর চাপ আসে তা হলে দরকারে যাতে প্রয়োজনে ত্রিপল টাঙিয়েও আপৎকালীন চিকিৎসা দিতে পারা যায়, সে ব্যবস্থাও একপ্রকার পাকা করে রাখা হয়েছে।

    তবে সব হাসপাতালেরই চিন্তা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা নিয়ে। যদিও এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দিরা দে পাল বলেন, ‘কোভিডের অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকটা এগিয়ে রেখেছে। জরুরি পরিষেবা দিতে আমরা সব সময়েই প্রস্তুত। রোগীর চাপ বাড়লে চিকিৎসক, নার্স যা আছেন, তাই দিয়েই চালাতে হবে।’

    বিভিন্ন হাসপাতালের কর্তারা জানাচ্ছেন, অতিমারী আবহে হাসপাতালগুলি মাসের পর মাস জরুরি পরিষেবা দিয়েছে। এখন সেই পরিস্থিতি কেটে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু অনেক হাসপাতালেই অব্যবহৃত অবস্থায় রয়ে গিয়েছে অনেক অতিরিক্ত শয্যা। অনেক জায়গায় আবার অক্সিজেন সরবরাহের লাইন পড়ে রয়েছে অব্যবহৃত অবস্থায়। সেগুলিকে প্রয়োজনে ঠিকঠাক করে নেওয়া যায় যাতে, তা নিয়েও তৎপরতা রয়েছে।

    জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী হাসপাতালের উপরে হামলা চালানো নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, এর ব্যতিক্রম ঘটে ভূরি ভূরিই। ইউক্রেনে রুশ হামলা কিংবা গাজ়ায় ইজ়রায়েলি হামলাতেও দেখা গিয়েছে সেই ছবি। অথচ যুদ্ধে জখম ব্যক্তিদের চিকিৎসা করতে হাসপাতালগুলির ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই সেগুলির সুরক্ষায় আগে থেকেই বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার।

    চিত্তরঞ্জন সেবা সদনের অধ্যক্ষ আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড়ো চিন্তা, এখানে ২৫০–র মতো শিশু ভর্তি থাকে। এ ছাড়া আছেন তাদের মায়েরা। কর্মী–আধিকারিকদের সবার ছুটিই বাতিল হয়েছে। সব রকম পরিস্থিতিতে শিশুদের রক্ষা করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

  • Link to this news (এই সময়)