শুক্রবার নয়, হাট বসত প্রতি শনিবারে। কিন্তু সেটা অনেক আগের কথা। সময় বদলেছে। এখন হাট বসে প্রতিদিনই। হাট যেখানে বসে, সেটা বনাঞ্চল। হাট-বাজার বসলে, হাজার ক্রেতা ভিড় করলে যা হওয়ার তাই হয়েছে শান্তিনিকেতনের সোনঝুরি হাটের।
খোয়াই লাগোয়া সোনাঝুরির ওই বন ‘রেড আর্থ ফরেস্ট’ নামে পরিচিত। লাল মাটির যে বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করত, এখন তা ধ্বংসের মুখে। কয়েকশো দোকান, কয়েক হাজার ক্রেতা, তাঁদের গাড়ি, বর্জ্যের চাপে নের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে বলে জাতীয় পরিবেশ আদালত (এনজিটি) সোনাঝুরির বনে সব রকম নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ দিল। কেন এমন হাল—তা জানতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে হলফনামাও তলব করেছে এনজিটি।
সোনঝুরির বন নিয়ে মামলা করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি বলেন, ‘বীরভূম বনবিভাগ কর্তৃপক্ষ একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে রেখেছে। সেখানে লেখা—‘সোনাঝুরি একটি বনভূমি। এখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ।’ আগে ফি শনিবার সোনাঝুরি বনে গুটিকয় স্থানীয় শিল্পী নিজেদের হাতের কাজ, বাড়িতে তৈরি পোশাক নিয়ে বসতেন। পর্যটকরা সেখানে ভিড় জমাতে শুরু করায় তা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়।
বাড়তে শুরু করে দোকানপাট, বিক্রেতার সংখ্যা। এখন হাতের কাজের সঙ্গেই সব ধরনের দোকান বসছে। তার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য খাবারের দোকান। অনেকে তৈরি করা খাবার বিক্রি করেন। কিন্তু দিব্যি আগুন জ্বালিয়ে খাবার তৈরি করেও বিক্রি করছেন অনেকে। নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
সেই সঙ্গেই আদালতে সুভাষের অভিযোগ, সোনাঝুরি হাটে সব থেকে বড় ক্ষতি হচ্ছে ওই বন লাগোয়া এলাকায় দেদার হোটেল-রিসোর্ট নির্মাণে। তার কয়েকটি আংশিক ভাবে বনাঞ্চলের মধ্যেই পড়েছে। সুভাষের প্রশ্ন, ‘অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, বনাঞ্চলের মধ্যে বা বন লাগোয়া জমিতে কী করে হোটেল-রিসোর্ট তৈরির অনুমোদন দিচ্ছে প্রশাসন!’
এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক, থার্মোকল এবং পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর সামগ্রী রোজ জড়ো হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে প্রকৃতির। রোজই হাট বসছে, প্লাস্টিক আর পরিষ্কার করা হচ্ছে না।
প্রচুর সংখ্যায় হোটেল-রিসোর্ট তৈরি হলেও কঠিন এবং তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের কোনও ব্যবস্থাই নেই। কঠিন বর্জ্যে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এলাকা। যে সব পর্যটক আসছেন হাটে, তাঁদের গাড়িগুলি পার্ক করা হচ্ছে বনের মধ্যেই। গাড়ির ধোঁয়াতেও জঙ্গলের ক্ষতি হচ্ছে। জঙ্গলে পাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তুলেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
আদালতের প্রশ্ন, হোটেল-রিসোর্টগুলি কী ভাবে পাম্প বসিয়ে জল তোলার অনুমতি পাচ্ছে? যদি অনুমতি না-ই থাকে তা হলে প্রশাসন পদক্ষেপ করছে না কেন? এনজিটি-র পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চের বিচারপতি বি অমিত স্থালেকর এবং বিশেষজ্ঞ সদস্য অরুণকুমার ভার্মার বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, মামলায় যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চার সপ্তাহের মধ্যে তার জবাব দিতে হবে। তার পর আদালত পরবর্তী নির্দেশ দেবে।