গোপাল সাহা: এবার সিনিয়র ডাক্তারদের যৌথ উদ্যোগে মাতৃদিবসের বড় উপহার হিসেবে একটি উদ্যোগ #FertilityFacts অর্থাৎ ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF)। এই পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তানধারণ ও প্রসব অথবা সন্তান ধারণের বিকল্প পদ্ধতিতে মাতৃত্ব ফিরিয়ে দেওয়া এবং একই সঙ্গে প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সময় মতো ও প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি।
বহু মহিলারা সন্তান নিতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে মাতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে এর প্রধান কারণ জীবনধারণের পদ্ধতি। এছাড়াও, পরিবেশ দূষণ, সময়মতো সন্তান প্রসব না করা, মাদকাসক্তি ইত্যাদি। মাতৃত্বের স্বাদ দেওয়ার বিকল্প পদ্ধতি ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন। যা সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত।
তবে পরিসংখ্যান বলছে দেশে এখনও পর্যন্ত ২.৫ থেকে তিন মিলিয়ন মানুষ এই পদ্ধতিকে গ্রহণ করতে পেরেছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞান ও বিশেষজ্ঞদের মতে দেশে বর্তমানে এই পদ্ধতিতে সন্তানধারণের সাফল্য ৫০% থেকে ৬০%। আর মাতৃদিবস উপলক্ষে মাতৃত্বের উপহার মায়েদের হাতে তুলে ধরতে এক অনবদ্য প্রচেষ্টা চিকিৎসকদের সঙ্গে 'অম্বুজা নেওটিয়া হেলথ কেয়ারে' এবং 'দ্য ফার্টিলিটি সেন্টার'-এর যৌথ উদ্যোগে 'ফার্টিলিটি ফ্যাক্টস'। তাদের মূল উদ্দেশ্য একদিকে, যেমন মাতৃত্বের উপহার, অপরদিকে প্রজনন সম্পর্কে মানুষের কাছে সঠিক ধারণা ও রোগী পরামর্শের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া। যাতে মানুষ তাঁদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা লাভ করতে পারেন, চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারেন এবং যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়।
উল্লেখ্য, চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্ধ্যাত্ব শুধু নারী নয় পুরুষদের ক্ষেত্রেও হতে পারে। বর্তমানে তার পরিমাণ যথেষ্টই বাড়ছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ছিল, এখন তার পরিমাণ আরও বাড়ছে।
এছাড়া বন্ধ্যাত্বের আরও কিছু কারণ উল্লেখযোগ্য ভাবে বলা যায়-
১) জীবনধারণ পদ্ধতি অর্থাৎ ফাস্টফুড খাওয়া,
২) অতিমাত্রায় মাদকাসক্তি,
৩) কর্মজীবনে মানসিক চাপ ইত্যাদি,
৪) শরীরের যত্ন না নেওয়া, শরীর চর্চা না করা, সহবাসে অনীহা, স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্পর্কে দূরত্ব বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি কারণে নারী এবং পুরুষ উভয় ক্ষেত্রেই ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর পুষ্টির অভাবে এই সমস্যা বেড়ে চলেছে।
এছাড়াও সঠিক সময়ে সন্তান ধারণ না করা এবং ব্যক্তিগত কারণে অনেক দেরিতে সন্তান নিতে গেলেও বড় রকম সমস্যা আসতে পারে। কারণ, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর সুস্থতার পরিমাণ কমতে থাকে।
ক্লিনিকল সাইকোলজিস্ট অঞ্জনা ঘোষ (দ্য ফার্টিলিটি সেন্টার) বলেন, “বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডিম্বাণু বা শুক্রাণুর গুণমান ছাড়াও, মানসিক স্বাস্থ্য প্রজনন সক্ষমতায় গভীর প্রভাব ফেলে। অনেক রোগীই বুঝতে পারেন না যে মানসিক চাপ তাঁদের প্রজনন সমস্যার একটি বড় কারণ হতে পারে। তাঁরা প্রায়শই এটি চুপচাপ সহ্য করেন, যা মানসিকভাবে আরও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।"
এই বিষয়ে আমরা সরাসরি কথা বলেছিলাম চিকিৎসক (স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ) শবনাম পারভীনের সঙ্গে, তিনি বলেন, "আজকের দ্রুতগতির জীবনে প্রজনন স্বাস্থ্য প্রায়শই উপেক্ষিত হয়। ব্যথাযুক্ত ঋতুস্রাব ও অনিয়মিত ঋতুস্রাবের মতো উপসর্গগুলোকে সাধারণত গুরুত্ব দেওয়া হয় না। চকোলেট সিস্ট, ফাইব্রয়েড, এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতার মতো শারীরিক সমস্যা প্রায়ই নির্ণয়হীন থেকে যায়, যা ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়। দ্রুত নির্ণয়ই একমাত্র উপায় এই জটিলতা প্রতিরোধ ও সফল ফলাফলের জন্য। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস) যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে এবং সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে তা শুধুমাত্র প্রজনন স্বাস্থ্য নয়, মেটাবলিক রোগ থেকেও রক্ষা করতে পারে।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, "আইভিএফ-এর সাফল্যের হার বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়, বিশেষ করে ত্রিশোর্ধ্ব নারীদের ক্ষেত্রে। তাই প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতনতা ও আগাম পদক্ষেপ অপরিহার্য। আগে অনেকের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা ছিল যে অন্যের অর্থাৎ অপরিচিত কোন ব্যক্তির শুক্রাণু ব্যবহার করা হবে, কিন্তু এখন সেই ধারণা বদলেছে এবং ভরসা করছে মানুষ"।